বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিং আয়। Bangladesh Freelancing Income

কর্মক্ষেত্রে তরুনদের আয়ের সম্ভাবনা -ফ্রিল্যান্সিং।


Bangladesh freelancing income


আসসালামু আলাইকুম ভালো আছেন নিশ্চই সবাই।আজকের এই টপিকে আমরা আলোচনা করবো বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিং আয়।আমরা মোটামুটি সবাই জানি যে ফ্রিলান্সিং কী।ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে একটি মুক্ত পেশা।যা একজন ফ্রিল্যান্সার নিজের স্বাধীনতা অনুযায়ী সঠিকভাবে কাজ করতে পারে।ফ্রিল্যান্সিং করার বিভিন্ন ওয়েবসাইট রয়েছে যেমন Upwork, Fiverr, Freelancer.com,Toptal ইত্যাদি। এসব সাইটে আপনি প্রফেশনাল একটি প্রোফাইল তৈরী করে ক্লায়েন্টের থেকে কাজ নিতে পারেন।তো চলুন জেনে নেই যে বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিং আয়

বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিং আয় 

অন্যান্য দেশের মতোও আমাদের বাংলাদেশেও ফ্রিল্যান্সার রয়েছে,যারা তাদের ক্যারিয়ার হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং আয়কে ধরে নিয়েছে বর্তমানে বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।বর্তমান সময়ে এসে তাদের মাসিক আয়ও বাড়ছে।বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররা মাসে $500 - $5000 আয় করতে পারেন অথবা তার চেয়ে একটু বেশি আয় করে থাকে।তবে তাদের এসব ইনকাম জেনারেট হয়েছে তাদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে। 

বাংলাদেশের সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগে এবং ইন্টারনেটের সহজ হওয়ার ফলে বাংলাদেশী তরুণরা ফ্রিল্যান্সিং করতে আগ্রহী হয়ে উঠে।তাদের কিছু জনপ্রিয় কাজের সঠিক ধারণা ও বিশ্লেষনের ক্ষমতা এবং অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তারা আজ সফল ফ্রিল্যান্সিং এ যোগ দিয়েছে।বাংলাদেশে বর্তমানে ফ্রিলান্সারদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং কোর্স বা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে যা নতুনদের জন্য সহায়ক হবে।বাস্তব কথা হচ্ছে এটি যে ফ্রিলান্সাররা তাদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অনুযায়ী তারা ভালো ইনকাম করতে পারছে।সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়ার জন্য অবশ্যই আপনার কোনো কাজের ক্ষেত্রে দক্ষতা থাকতে হবে এবং ভাষা পড়া ও লেখা,কম্পিউটার বেসিক জ্ঞান থাকলেই আপনি সফল ফ্রিল্যান্সার হতে পারবেন।চেষ্টা করবেন যে ফ্রিল্যান্সিং দিয়ে ক্যারিয়ার গড়তে হলে অবশ্যই আপনাকে এসব ধারণা থাকতে হবে।বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিং করে বাংলাদেশের তরুণরা ভালো আর্নিং করে।সুতরাং নতুন যারা আছো তাদেরকেও মাঠে নামতে হবে।দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা নিয়ে।

একজন ফ্রিল্যান্সারের মাসিক আয় কত

একজন ফ্রিল্যান্সাররের মাসিক আয় এটা নির্ভর করে তার কাজের দক্ষতার উপরে।এমনকি তাদের কাজের পরিমাণের উপরেও নির্ভর করে।একজন দক্ষ ফ্রিল্যান্সার মাসে অন্তত $500-$10,000 আয় করতে পারে শুধুমাত্র তার দক্ষতা অনুযায়ী। চলুন জেনে নেই যে একজন ফ্রিল্যান্সারের আয় কত
  • নতুন ফ্রিল্যান্সার : নতুন হিসেবে একজন ফ্রিল্যান্সারের মাসিক আয় হতে পারে $100-$300 তাদের এই আয় হয় কম দক্ষ ও অভিজ্ঞতার জন্য।মোটামুটি চলে এই আয়।আস্তে আস্তে দক্ষ হতে পারবে।কেউই দক্ষ হয়ে জন্মায়নি দক্ষ তাকে করা হয় বা হয়ে থাকে।তাই লেগে থাকা ভালো।
  • মধ্য ফ্রিল্যান্সার : মধ্য ফ্রিল্যান্সার বলতে বুঝায় তাদেরকে যারা কি না মোটামুটি দক্ষ।তারা মূলত মাসে ইনকাম করতে পারে। যাদের কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে,যারা মোটামুটি কাজ পারে।তাদের মাসিক ইনকাম হতে পারে $500-$1,000 এর মধ্যে হয়ে থাকে।
  • অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্সার : অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্সার বলতে বুঝায় যারা খুব দক্ষ এবং কাজের পরিমাণ বেশি পায় এবং সকল ক্ষেত্রে তারা আয় করতে পারেন।তাদের অভিজ্ঞতা কমপক্ষে ৫-৭ বছরের হয়ে থাকে।তাদের গড় মাসিক আয় থাকে $1,000-$5,000 এর ভিতরে বা তার চেয়ে বেশি।
অবশ্য এই ইনকাম নির্ভর করে কাজের ধরন,দক্ষতা,অভিজ্ঞতা, কাজের পরিমাণ ও ক্লায়েন্টের সংখ্যা।নতুন যারা তারা যদি প্রথম অবস্থায় যায় তাদের ক্লায়েন্ট সংখ্যা খুব কম হতে পারে।এতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই, কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন একদিন হবেই।

ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে বাংলাদেশের অবস্থান কত

ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে বাংলাদেশের অবস্থা কত তা জানা একটু কঠিন হতে পারে, কারণ সেরকম কোনো তথ্য উপাত্ত বর্তমানে আপডেট হয়নি।এছাড়াও ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে তাই এর সঠিক তথ্য দেয়া মুশকিল। তবে এটা জানা যায় যে ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে বাংলাদেশের অবস্থা শীর্ষস্থানীয় রয়েছে।কিছু প্রধান কারনে তারা আজ শীর্ষ স্থানে আছে : 
  • বিশ্বব্যাপী লোকেশন : বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররা ফ্রিলান্সার এবং Upwork -এর মতো আন্তর্জাতিক ফ্রিল্যান্সিং প্লাটফর্মে উচ্চ স্থান অধিকার করে আছে।বর্তমানে বাংলাদেশ গ্লোবাল মার্কেটপ্লেসে শীর্ষ স্থান দখল করে আছে।
  • সংখ্যা ও সম্প্রসারণ : বাংলাদেশে বর্তমানে লক্ষ্যেরও বেশি একটিভ ফ্রিলান্সার রয়েছে। ২০১৯ সালের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশের ফ্রিলান্সারদের সংখ্যা ৬.৫ মিলিয়নের বেশি।বর্তমানে এটি আরো বাড়ছে।
  • উন্নত ইন্টারনেট সুবিধা : দ্রুত গতির ইন্টারনেট ব্যবহার করাতে বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সারদের এগিয়ে যেতে সহায়ক।এবং সিম ব্যবহারে সাশ্রয়ী মূল্যের ডেটা ব্যবহার করে সহজ হয়ে যাচ্ছে এছাড় Wifi তো রয়েছেই।
মূলত ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরের ফলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভূমিকা পালন করছে।দ্রুত ফ্রিল্যান্সারদের সংখ্যা বাড়ায় অর্থনৈতিক ভূমিকা পালন করছে।

নতুনদের জন্য সেরা ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস কোনটি

নতুনদের জন্য বেশকিছু ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস রয়েছে।যেখানে নতুনরা চাইলেই সেখানে নতুন একাউন্ট করে প্রোফাইল ১০০% কমপ্লিট করে আয় করতে পারেন।নিচে কিছু প্লাটফর্মের নাম দেওয়া হলো : 
  • Upwork : আপওয়ার্ক হচ্ছে ইন্টারনেটের একটি বড় ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্ল্যাস।এটি বিভিন্ন ধরনের কাজের সুযোগ দিয়ে থাকে। যেমন-ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ডাটা এন্ট্রি, রাইটিং,গ্রাফিক্স ডিজাইন ইত্যাদি কাজ এই প্লাটফর্মে করা যায়।আপওয়ার্কে ছোট ছোট কাজের মাধ্যমে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন। 
  • Freelance : ফ্রীল্যান্সার প্লাটফর্মে ছোট কাজ বিড করে আয় করতে পারবেন এবং এর সাথে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতায় পরিণত হতে পারবে।
এগুলোই মূলত নতুনদের জন্য সেরা প্লাটফর্ম। যেখানে আপনি ছোট কাজ করে প্রাথমিক অবস্থায় কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন।

ফ্রিল্যান্সিং প্লাটফর্মে টাকা পাওয়ার জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম কোনটি

বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের টাকা পাওয়ার জন্য কয়েকটি জনপ্রিয় মাধ্যম রয়েছে নিছে আলোচনা করা হলো : 

(১) Payoneer : ফ্রিল্যান্সারদের জন্য পেওনিয়ার হলো জনপ্রিয় একটি পেমেন্ট মাধ্যম।এটি ফ্রিলান্সারদের জন্য একটি আন্তর্জাতিক পেমেন্ট সিস্টেম। পেওনিয়ার দ্রুত টাকা গ্রহন করা যায় ও সহজ পদ্ধতি।পেওনিয়ার মাস্টারকার্ডের মাধ্যমে আপনি ব্যাংক একাউন্টে টাকা পাঠানো যায়।

(২) Skrill : স্ক্রিল হচ্ছে অন্য আরেকটি জনপ্রিয় পেমেন্ট মাধ্যম যেখানে আপনি খুব সহজে টাকা আনা নেওয়া করতে পারবেন।স্ক্রিল থেকে যেকোন আন্তর্জাতিক লেনদেন করা যায় ও টাকা স্থানান্তর করা যায়।

(৩) Bank Transfer : ব্যাংক ট্রান্সফার অনেক ফ্রিল্যান্সিং প্লাটফর্ম ব্যাংক ট্রান্সফার সুবিধা প্রদান করে।যদিও সরাসরি ব্যাংকে আনা যায় না,তাই কেউ কেউ তৃতীয় ব্যক্তির মাধ্যমে দেশে টাকা আনে।

(৪) Paypal : পেপাল দিয়েও সহজে লেনদেন করা যায়।যদিও এটি বাংলাদেশে এটি সাপোর্টেড নয়,তবুওও কেউ আছে যারা তৃতীয় উপায়ে টাকা আনে।

(৫) বিকাশ, নদদ,রকে,উপায় : এটি শুধুমাত্র বাংলাদেশে সাপোর্ট করে।তবে কিছু কিছু আন্তর্জাতিক গেটওয়ের মাধ্যমে বিকাশে টাকা আনা যায়।

বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং সেক্টর কোনটি

ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে অনেক ধরনের কাজ রয়েছে এর মধ্য থেকে কিছু প্রধান কাজ যা প্রতিনিয়ত হচ্ছে তা নিচে দেওয়া হচ্ছে : 

(১) ওয়েব ডেভেলপমেন্ট : ওয়েবসাইট ডিজাইন,মেইনটেইনেন্স সংক্রান্ত কাজ করে থাকে।বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের তাদের অনলাইন উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য ওয়েবসাইট তৈরি করে থাকে।তাই এই কাজের মূল্য অনেক বেশি।

(২) গ্রাফিক্স ডিজাইন : ফ্রিল্যান্সিং এ অন্য আরেকটি জনপ্রিয় ওয়ার্ক হচ্ছে গ্রাফিক্স ডিজাইন। মূলত লগো তৈরি, ব্যানার তৈরি, পোস্টার ডিজাইন ইত্যাদি হচ্ছে গ্রাফিক্স ডিজাইনের কাজ।

(৩) ডিজিটাল মার্কেটিং : অনলাইন ব্যবসার বৃদ্ধির জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কন্টেন্ট মার্কেটিং, সোসিয়াল মিডিয়া মার্কেটিং এবং SEO. এসব হচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিং। 

(৫) কন্টেন্ট রাইটিং ও কপিরাইটিং : এটির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বিভিন্ন ব্লগ পোস্ট, আর্টিকেল, ওয়েবসাইট কন্টেন্ট, প্রোডাক্ট ডিস্ক্রিপশন ইত্যাদি। এই কাজের জন্য কিছু দক্ষতার প্রয়োজন যেমন - SEO, রিসার্চ এবং ক্রিয়েটিভ রাইটিং। 

(৬) মোবাইল এপ ডেভেলপমেন্ট : এন্ডয়েড ও iOS এর মতো এপস উন্নয়ন করে আয়।এটির জন্য আপনার কিছু দক্ষতার প্রয়োজন যেমন - java,swift,kotlin,react nativ ইত্যাদি। বর্তমানে মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে তাই এটিও একটি জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং সেক্টর। 

এসব ছাড়াও আরো অনেক সেক্টর রয়েছে যেগুলো আপনি একটু ঘাটাঘাটি করলে বুঝতে পারবেন।

শেষ কথা

ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে একটি বড় আয়ের মাধ্যম।এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ফ্রিলান্সাররা অনেক আয় করছেন।এসব প্রতিষ্ঠানে বা প্লাটফর্মে বাংলাদেশীরা কাজ করে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।বাংলাদেশের ফ্রিলান্সাররা অনেক এগিয়ে আছে।বিশ্বের শীর্ষে অবস্থা করছে এই বাংলাদেশের তরুণরা।নতুনদের জন্য এসব কাজ কঠিন মনে হতে পারে,তবে একটু ইন্টারনেট ঘাটাঘাটি করে দেখবেন সবকিছু বুঝতে পারবেন।প্রথমে আপনাকে অবশ্যই ধৈর্য করে যেতে হবে।কারণ ফ্রিলান্সার মার্কেটে বর্তমানে অনেক লোক কাজ করে যাচ্ছে। তাই কাজ পেতে একটি সময় লাগতে পারে, কাজ পাবেন না এমন কিছু না,পাবেন তবে একটু দেরি হতে পারে।আর একবার যদি একটি ভালোভাবে করে দিতে পারেন তাহলে ক্লায়েন্টেদের সাথে পরিচিত হলে আরো অনেক কাজ পাবেন।মূলত এইভাবেই আপনি এগিয়ে যেতে পারবেন।তো আশা করি ভালো লাগবে পোস্টটি।আপনাদের সুবিধার্থে পোস্ট লিখে থাকি তাই সঙ্গেই থাকুন।ভালো থাকুন। আল্লাহ হাফেজ। 


নবীনতর পূর্বতন

نموذج الاتصال