ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম। Bank Account Opening Rules

একটি ব্যাংক একাউন্ট খোলার - সহজ নিয়ম ফলো করুন।


How to open new bank account



আসসালামু আলাইকুম আশা করি সবাই ভালো আছেন। আজকের ব্লগে আপনারা জানতে পারবেন যে ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে। একটি ব্যাংক খোলার নিয়ম অনেক সহজ কিন্তু অনেকে এই বিষয়ে জ্ঞান কম থাকার কারণে তাদের কাছে মনে হয় অনেক কঠিন বা ঝামেলা বেশি।একদমই সিম্পল নতুন ব্যাং একাউন্ট খোলা। মূলত ব্যাংক একাউন্ট হলো একটি আর্থিক হিসাব যা ব্যাংকে খোলা হয়, যেখানে তাদের গ্রাহক তাদের টাকা-পয়সা জমা রাখতে পারে,প্রয়োজন হলে টাকা-পয়সা উত্তোলন করতে পারে এবং অন্যান্য লেনদেন ও কার্যক্রম গ্রাহকরা করে থাকে। ব্যাংক একাউন্ট বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে যেমন সঞ্চয়ী হিসাব,চলতি হিসাব, ফিক্সড হিসাব। ব্যাংক গ্রাহকদেরকে ব্যাংক একাউন্ট নম্বর দিয়ে থাকে যা শুধুমাত্র ব্যাংক আর তার গ্রাহকেরাই জানে। তাদেরকে সহজ ও নিরাপদ এটিএম কার্ড ও ভিসা কার্ড অথবা ডেবিট কার্ড দিয়ে থাকে সহজে লেনদেন করার জন্য।

ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম : 


(১) ব্যাংক নির্বাচন : 

প্রথমে আপনাকে ব্যাংক নির্বাচন করতে হবে যে আপনি কোন ব্যাংকে একাউন্ট করতে ইচ্ছুক। যেমন - ইসলামি ব্যাংক,ডাচ বাংলা ব্যাংক,ইস্টার্ন ব্যাংক,ব্যাংক এশিয়া ইত্যাদি আরো অনেক ব্যাংক রয়েছে যেখানে আপনি ব্যাংক একাউন্ট খোলতে পারবেন।

(২) একাউন্টের ধরন নির্বাচন : 

আপনি কোন হিসাবে একাউন্ট খোলতে চান যেমন-চলতি হিসাব,সঞ্চয়ী হিসাব নাকি ফিক্সড ডিপোজিট একাউন্ট। আপনার যে একাউন্ট প্রয়োজন সেই অনুযায়ী আপনি একাউন্ট খোলবেন।

(৩) দরকারী ডকুমেন্ট : 


তারপরে আপনাকে ব্যাংকে গিয়ে আপনার সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিবেন। যেমন -
  • জাতীয় পরিচয়পত্র বা NID CARD অথবা যদি পাসপোর্ট থেকে থাকে তা দিলেও হবে।
  • প্রমাণ ঠিকানা হিসেবে আপনাকে দিতে হবে বিদ্যুৎ বিল,ট্যাক্স কাগজ,গ্যাস বিল ইত্যাদি দেওয়া লাগতে পারে।
  • পাসপোর্ট সাইজ ছবি ২-৪ কপি। 
  • TIN সার্টিফিকেট (যদি প্রয়োজন হয়)।
  • নমিনি হিসেবে একজনকে দিতে হবে।নমিনির তথ্য দিতে হবে।
  • আবেদনের জন্য একটি ফরম পূরন করতে হবে।সকল তথ্য NID কার্ড অনুসারে দিতে হবে।কিছু ব্যাংক অনলাইনে ফরম পূরণ করতে দেয়।
  • আবেদন দেওয়ার পরে আপনার সকল তথ্য যাচাই করবে।
  • তারপরে আপনাকে প্রথমেই কিছু টাকা ডিপোজিট করতে হবে।
  • চেক বা এটিএম অথবা ডেবিট কার্ড আপনাকে কিছুদিন পরে দিতে পারে।আপাতত আপনাকে শুধুমাত্র চেকবই দিবে ব্যাংক থেকে।
এসব তথ্য দিয়ে দিলে আপনার একটি খোলা হয়ে যাবে।

ব্যাংক একাউন্ট করতে কী কী লাগে : 

ব্যাংক একাউন্ট করতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র লাগে।এগুলো দিলে যাচাই করে আপনার একাউন্ট খোলে দিবে।
  • NID Card
  • পাসপোর্ট সাইজ ছবি। 
  • আপনার ঠিকানার প্রমাণপত্র যেমন - বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল,ট্যাক্সের কাগজ ইত্যাদি।
  • যদি প্রয়োজন হয় তাহলে TIN সার্টিফিকেট। 
  • নমিনির তথ্য দিতে হবে।
  • আবেদনের কাগজ পূরন করে দিতে হবে।
কিছু কিছু ব্যাংকে অতিরিক্ত কিছু কাগজপত্র জমা দিতে হতে পারে যেমন -
  • জন্ম নিবন্ধনের কাগজ
  • ছাত্র পরিচয়পত্র।
তবে ব্যাংক অনুযায়ী ডকুমেন্ট ভিন্ন হতে পারে।তাই যে ব্যাংকে আপনি একাউন্ট করবেন সে ব্যাংকে গিয়ে তাদের ডকুমেন্টস সম্পর্কে জেনে নিবেন।তবে উল্লেখিত কাগজপত্র লাগবে।এছাড়াও আরো অতিরিক্ত কিছু ডকুমেন্টসের দরকার হতে পারে তাই নির্দিষ্ট ব্যাংকে গিয়ে জেনে নিতে পারেন।

ব্যাংক একাউন্ট করতে কত টাকা লাগবে 

ব্যাংক একাউন্ট করতে বিভিন্ন ব্যাংকের ক্ষেত্রে ভিন্ন হতে পারে। যেমন -
  • সঞ্চয়ী হিসাব : সঞ্চয়ী হিসাবে একাউন্ট করতে গেলে মিনিমাম ৫,০০ টাকা থেকে ১,০০০ টাকার মতো লাগতে পারে।এই ফী বিভিন্ন ব্যাংকে বিভিন্ন ফী দেওয়া লাগতে পারে।
  • চেকিং বা কারেন্ট একাউন্ট : চেকিং বা কারেন্ট একাউন্টে ৫,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকার ডিপোজিট দেওয়া লাগে।
  • ফিক্সড বা ডিপোজিট হিসাব : এই ধরনের হিসাবে মিনিমাম ১০,০০০ টাকা ডিপোজিট করতে হয়,বা তার চেয়ে বেশি করা লাগতে পারে।ব্যাংক অনুযায়ী কম-বেশি হতে পারে।
কিছু ব্যাংক বিশেষ কিছু সুবিধা দিয়ে থাকে 
  • ছাত্রদের জন্য বিশেষ সঞ্চয়ী হিসাব : নূন্যতম ডিপোজিট খুব কম ৫,০০ থেকে ১,০০০ এর ভিতরে।
  • সামাজিক সুরক্ষা একাউন্ট : নূন্যতম ডিপোজিটের একাউন্ট করা যায় এই ধরনের একাউন্টে। 

ব্যাংক একাউন্ট কত প্রকার ও কী কী 

ব্যাংক একাউন্ট বিভিন্ন রকমের হতে পারে তা নিচে দেওয়া হলো :

(১) সঞ্চয়ী হিসাব :-


  • ব্যক্তিগত সঞ্চয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়
  • কম সুদ প্রদান করে
  • সীমিত লেনদেন করে
  • চেকবই ও ডেবিড কার্ড দেওয়া হয়

(২) কারেন্ট একাউন্ট :


  • ব্যবসায়ীক লেনদেনের জন্য উপযুক্ত। 
  • খুব কম সুদ প্রদান করে।
  • সীমাহীন লেনদেন করে।
  • চেকবই ও ওভারড্রাফট রয়েছে।

(৩) ফিক্সড ডিপোজিট একাউন্ট :


  • নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য অর্থ জমা রাখতে হয়।
  • উচ্চ সুদ দিয়ে থাকে।
  • মেয়াদ শেষে সুদসহ আসল অর্থ প্রদান করে থাকে।
  • মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগে অর্থ উত্তোলন করা যায় না।

(৪) রিকারিং ডিপোজিট একাউন্ট : 


  • নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা রাখতে হয়।নিয়মিত অর্থ জমা রাখতে হয়।
  • সুদের হার সঞ্চয়ী হিসাবের চেয়ে বেশি সুদ দেওয়া হয়।
  • মেয়াদ শেষে সুদসহ আসল অর্থ ফেরত দেওয়া হয়।

(৫) ডিমেট একাউন্ট :


  • শেয়ার এবং সিকিউরিটিজ এর ইলেক্ট্রনিক হোল্ডিং এর জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • শেয়ার কেনা-বেচা করা হয়।
  • মূলত বিনিয়োগকারীদের জন্য 

(৬) ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেম : 


  • পেনশন সঞ্চয়ের জন্য। 
  • অবসরসময়কালীন অর্থ সঞ্চয়ের জন্য উপযুক্ত। 

(৭) নগদ ঋণ একাউন্ট : 


  • ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কাজ করে,যেখানে ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের জন্য ঋণ প্রদান করা হয়।
  • ওভারড্রাফটের সুবিধাও রয়েছে।

(৮) বাচ্চাদের নামে সঞ্চয়ী একাউন্ট : 


  • শিশুদের নামে সঞ্চয়ী একাউন্ট খোলা হয়।
  • অভিভাবকরা একাউন্ট পরিচালনা করে থাকে।

বছরে ব্যাংকে কত টাকা রাখা যায় 

মূলত ব্যাংকে অর্থ রাখার কোনো নিয়ম নেই। তবে কিছু কিছু ব্যাংকে অর্থ রাখার কিছু নিয়ম থেকে থাকে। সাধারণত ব্যাংকে যত খুশি টাকা-পয়সা রাখা যায়। যদিও কিছু ব্যাংক টাকা রাখার ব্যপারে কিছু শর্ত আরোপ করে থাকে।

তবে বড় এমাউন্টের অর্থ জমা দেওয়া বা প্রত্যাহার করার ক্ষেত্রে ব্যাংকের আইন অনুযায়ী ব্যাংকগুলো আপনার আয়ের উৎস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে পারে বা ইনকুয়িয়ারি করতে পারে।এছাড়াও বড় লেনদেনের জন্য কর বিষয়ক নিয়মাবলি অনুসরণ করা উচিত।

শেষের কথা 

ঠিক এইভাবেই আপনি সহজে একটি ব্যাংক একাউন্ট করতে পারেন।আশা করি আপনারা বুঝতে পারলেন যে কিভাবে ব্যাংক একাউন্ট খোলবেন।কিভাবে কী, কী কী কাগজপত্র জমা দিতে হবে।তবে ব্যাংকের লেনদেন নিরাপদ। বিভিন্ন ব্যাংকের জন্য বিভিন্ন নিয়মাবলি ও শর্তাদি রয়েছে এগুলো গ্রাহকের মেনে চলা গ্রাহকের দায়িত্ব। সুতরাং গ্রাহক অবশ্যই ব্যাংককে সহযোগিতা করবেন তাদের শর্তাদি মেনে ও ব্যাংকের আইন অনুযায়ী আপনি লেনদেন করবেন বা অন্য কোনো সুবিধা গ্রহন করবেন।তো জানতে পারলেন আপনারা যে কিভাবে ব্যাংক একাউন্ট খোলতে হয়।আশা করি পোস্টটি ভালো লাগবে। সবাই ভালো থাকবেন আসসালামু আলাইকুম। 
নবীনতর পূর্বতন

نموذج الاتصال