ডাটা এন্ট্রি। Data Entry.

অনলাইন ও চাকরি আয়ের একটি লাভজনক ক্যারিয়ার - ডাটা এন্ট্রি। 



আসসালামু আলাইকুম আশা করি সবাই ভালো আছেন। বন্ধুরা আজকে আপনাদের সাথে একটি নতুন ব্লগ শেয়ার করবো ডাটা এন্ট্রি কী,ডাটা এন্ট্রি সম্পর্কে বিস্তারিত। আমরা তো মোটামুটি সবাইই জানি যে ডাটা এন্ট্রি কী।তো চলুন জেনে নেই যে ডাটা এন্ট্রি সম্পর্কে বিস্তারিত। 

ডাটা এন্ট্রি কী 

ডাটা এন্ট্রি (Data Entry) হলো একটি কাজ যেখানে আপনি বিভিন্ন ধরনের ডেটা সংগ্রহ করা।এসব ডেটার মধ্যে বিভিন্ন বিষয় থাকতে পারে যেমন - ট্যাক্সট,ছবি,ফোন নাম্বার,ইমেইল তালিকা,ঠিকানা ইত্যাদি। এসব কাজ আপনি অনলাইন ও চাকরি দুটি জায়গাতেই করতে পারবেন।কাজগুলো সম্পূর্ণ ম্যানুয়ালি করা হয়ে থাকে।কিছু ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয়ভাবে হয়ে থাকে।

ডাটা এন্ট্রি কাজের মধ্যে থাকে :

১) কাগজ বা ইন্টারনেট থেকে তথ্য কম্পিউটারে প্রবেশ করানো।
২) ফরম পূরণ করা।
৩) ইমেইল বা অন্যান্য ডকুমেন্ট থেকে ডেটা স্থানান্তর করা।
৪) ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানের লেনদেনের রেকর্ড রাখা।
৫) গ্রাহক তথ্য বা ডাটাবেজ আপডেট রাখা।
৬) ফোন নাম্বার,ইমেইল, ঠিকানা ইত্যাদি সংরক্ষণ করে কম্পিউটারে প্রবেশ করানো।

ডাটা এন্ট্রি কী মোবাইলে করা যায় 
হ্যাঁ, ডাটা এন্ট্রির মতো কাজ আপনি মোবাইলেও করতে পারবেন।বর্তমানে অনেক মোবাইল এপ্লিকেশন ব্যবহার করে ডাটা এন্ট্রি কাজ করা সম্ভব। নিচে কিছু উপায় উপায় রয়েছে যেখানে আপনি ডাটা এন্ট্রির কাজ করতে পারবেন। 

(১) মোবাইল এপ্লিকেশন : মাইক্রোসফট এক্সেল,গুগল ডক্স ও গুগল শিটস ব্যবহার করে আপনি ডাটাগুলো সহজে এন্ট্রি করতে পারবেন।

(২) অনলাইন ফর্ম : গুগল ফর্ম,জোট ফর্ম ইত্যাদি ফর্ম নির্মাণ কোম্পানির এপ্লিকেশন ব্যবহার করে ডাটা সংগ্রহ ও ডাটা এন্ট্রি করা যায়।

(৩) ক্লাউড সিস্টেম : বিভিন্ন ধরনের ক্লাউড ভিত্তিক সিস্টেম ব্যবহার করেও ডাটা এন্ট্রি করা যায় যেমন - ড্রপবক্স,ওয়ানড্রাইভ ইত্যাদি ব্যবহার করে ডাটা কালেক্ট ও এন্ট্রি করা যায়।

(৪) ওসিআর (Optical Character Recognition) : কিছু  এপস ব্যবহার করেও আপনি ডাটা এন্ট্রি করতে পারবেন যেমন - ক্যাম স্ক্যানার,এডোবি স্ক্যানার এসব এপস দিয়ে আপনি ছবি তুলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডাটা এন্ট্রি করা যায়।

এই এপস বা এপ্লিকেশন ব্যবহার করে আপনি খুব সহজে ডাটা এন্ট্রির কাজ করতে পারবেন।

ডাটা এন্ট্রি জব বাংলাদেশ

ডাটা এন্ট্রি জবের চাহিদা বাংলাদেশে দিন দিন বেড়ে চলেছে।বিভিন্ন কোম্পানী তাদের ডাটাবেজ ম্য্যনেজম্যান্ট সিস্টেমের জন্য নিয়োগ দিয়ে থাকে।নিচে কিছু জব পোর্টাল দেওয়া হলো যেখানে আপনি ডাটা এন্ট্রির চাকরি করতে পারেন।

(১) অনলাইন জব পোর্টাল : চাকরি.কম,বিডি জবস,ক্যারিয়ার জ্যাট,এক্সট্রাজবস ইত্যাদি জব পোর্টালে আপনি ডাটা এন্ট্রির কাজ করে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন।

(২) ফ্রিল্যান্সিং প্লাটফর্ম : Upwork, Freelance, Fiverr - এর মতো প্লাটফর্মে আপনি ডাটা এন্ট্রির কাজের জমা করে আপনি ভালো পরিমানে একটা আর্নিং করতে পারেন।এসব প্লাটফর্মে আপনি আন্তর্জাতিক ভাবে ডাটা এন্ট্রির কাজ করতে পারবেন। 

(৩) কন্টেন্ট ক্রিয়েশন কোম্পানি : অনেক কন্টেন্ট ক্রিয়েশন কোম্পানী ডাটা এন্ট্রির কাজের জন্য কর্মী নিয়োগ করে থাকে।

(৪) সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান : বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট এর জন্য ডাটা এন্ট্রি কাজের কর্মী নিয়োগ করে থাকে। 

ডাটা এন্ট্রি করার প্রয়োজনীয় দক্ষতা 

  • আপনার টাইপিং স্পীড অবশ্যই দ্রুত হতে হবে।
  • বেসিক কম্পিউটার জ্ঞান থাকতে হবে যেমন - মাইক্রোসফট ওয়ার্ড,এক্সেল এর সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে।
  • ইংরেজি ও বাংলা ভাষা বুঝার ও লেখার দক্ষতা থাকতে হবে।
  • ডাটা ম্যানেজমেন্ট ও বিশ্লেষণের দক্ষতা থাকতে হবে।

ডাটা এন্ট্রি শিখতে কত দিন লাগে

ডাটা এন্ট্রির কাজের সময় বিভিন্ন ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করে যেমন - আপনার কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা, টাইপিং স্পিড,সফটওয়্যার ব্যবহারের দক্ষতার উপর নির্ভর করে।তবে যারা নতুন আছে তাদেরকে মূল বিষয়গুলো শিখতে বেশি দেরি হয় না।নিচে কিছু বেসিক ধারনা দেওয়া হলো যে কত দিন লাগবে :

  • আপনার টাইপিং স্পিড যদি কম হয় তাহলে মিনিমাম ২-৪ সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।সম্পূর্ণটা আপনার উপরে নির্ভর করে।
  • কম্পিউটার ব্যবহারের জ্ঞান।বেসিক জ্ঞান আপনি কতটুকু জানেন তার উপরে নির্ভর করে।
  • ডাটা এন্ট্রি স্কলি সম্পর্কে আপনি কতটুকু বুঝেন এবং ডকুমেন্ট টাইপ সম্পর্কে কতটুকু জ্ঞান রয়েছে।কম হলে ১০-১২ দিন সময় লাগতে পারে।
  • মাইক্রোসফট এক্সেল, গুগল শিটস সম্পর্কে ধারনা কেমন তার উপরে নির্ভর করে।
  • আপনার প্র‍্যাকটিস দক্ষতা কতটুকু তা জানতে হবে আপনাকে।
মূলত এসব কাজ (Data Entry) কাজ কত দিনে শিখবেন এটা আপনার দক্ষতা ও স্কিলের উপর নির্ভর করে।কাজের গতি কম হলে অবশ্যই আপনাকে এক্সপার্ট হয়ে কাজে যোগ দেয়া উচিত,তা না হলে পরে আপনারই ক্ষতি হতে পারে।

ডাটা এন্ট্রি অপারেটর এর বেতন কত

বাংলাদেশের ডাটাবেজ ম্যানেজমেন্ট এর কর্মিদের বেতন বিভিন্ন ফ্যাক্টর অনুযায়ী হয়ে থাকে যেমন - কাজের দক্ষতা,কোম্পানির আকার,অবস্থান এবং অভিজ্ঞতা অনুযায়ী। নতুন ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের বেতন ৮,০০০ থেকে ১০,০০০ ভিতরে হয়ে থাকে।মধ্য পর্যায়ের ডাটা এন্ট্রি কর্মীদের ১-৩ বছরের অবিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের বেতন ১৫,০০০ থেকে ২০,০০০ এর মধ্যে হয়ে থাকে।উচ্চ পর্যায়ের অভিজ্ঞ যারা তাদের বেতন ২০,০০০ এর থেকে বেশি হয়ে থাকে।

এবং যারা পার্ট-টাইম ডাটা এন্ট্রি জব করে থাকে তাদেরকে ৫০-২০০ টাকা দিয়ে থাকে প্রতি ঘন্টায়।যারা ফ্রিল্যান্সিং করে তারা মূলত ডাটা এন্ট্রির কাজের উপর নির্ভর করে যেমন - ছোট কাজের জন্য ৫-১০ ডলার দিয়ে থাকে এবং বড় কাজের জন্য ১০-৫০ ডলারের ভিতরে পেমেন্ট করে থাকে।তবে কিছু কিছু কোম্পানি বিশেষ কিছু সুবিধা দিয়ে থাকে।

ডাটা এন্ট্রি অপারেটর 

ডাটা এন্ট্রি অপারেটর হচ্ছে এমন লোক যিনি ডাটা সংগ্রহ করে কম্পিউটার ডেটাবেজ ফরম্যাটে কম্পিউটার সিস্টেমে প্রবেশ করিয়ে থাকে।এসব কর্মী তাদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অনুযায়ী কাজ করে থাকে।তথ্যের সঠিকতা যাচাই করে ডাটা সংগ্রহ করে এবং কম্পিউটারে প্রবেশ করায়।

ডাটা এন্ট্রি ফ্রিল্যান্সিং 

ডাটা এন্ট্রি ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে একটি সহজ কাজ যা আপনি ঘরে বসে কাজ করে ইনকাম করতে পারেন।এখানে আপনি ছোট বড় প্রকল্প নিয়ে ডাটা এন্ট্রির কাজ করতে পারবেন।এসব কাজ আপনি কিছু বড় বড় প্লাটফর্মে পেয়ে যাবেন।যেমন - Upwork, Fiverr, Freelancer ইত্যাদি।আপনার প্রোফাইল ভালোভাবে তৈরি করেন।ক্লায়েন্টের পছন্দ হলে আপনাকে কাজ দিবে।এমনভাবে প্রোফাইল বানান যে ক্লায়েন্ট আকর্ষিত হয়।তবে আপনার প্রোফাইলে ক্লায়েন্টের চোখ যাবে আপনার দক্ষতার দিকে।তাই আপনি আপনার দক্ষতা সম্পর্কে খুব ভালো করে লিখে নিবেন।আপনার গিগটি যেন প্রফেশনাল লুক হয়।তবেই আপনি কাজ পেতে সহজ হবে।আপনার পূর্বের কাজের কোনো অভিজ্ঞতা থাকলে তার নমুনা আপলোড করে রাখবেন যাতে ক্লায়েন্টরা দেখতে পারে আপনার কাজের বিবরন।কাজ পেয়ে গেলে ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগ রাখবেন।ভালোভাবে তাদের কাজটি বুঝে নিবেন।কাজের প্লাটফর্মে নিয়মিত কাজের আপডেট দেখুন।নতুন নতুন জব আসছে কি না তা চেক করে বিড করবেন।ক্লায়েন্টের কাজ সবসময় সঠিক ও নির্ভুলভাবে সাবমিট করুন এতে করে ক্লায়েন্টের সাথে আপনার সম্পর্ক ভালো থাকবে।নিয়মিত নতুন সফটওয়্যার ও টুলস সম্পর্কে জ্ঞান ও দক্ষতা রাখুন।আশা করি বুঝতে পারছেন।

উপসংহার

বন্ধুরা জানতে পারলেন যে ডাটা এন্ট্রি কী এবং বিস্তারিত কিছু জানলেন।আশা করি পোস্টটি ভালো লাগবে আপনার।আর হ্যাঁ এসব কাজ আপনি মোবাইলেও করতে পারবেন তবে মোবাইলের স্ক্রিন ছোট হওয়ার ফলে একটু অসুবিধা হতে পারে।তো এটা কোনো বিষয় না।মোবাইলের তুলনায় কম্পিউটারে ডাটা এন্ট্রির কাজ সহজে করা যায়।মোবাইল দিয়ে করা যায় না এমন কোনো বিষয় না।তবে কাজের দ্রুততার মধ্যে একটু ফারাক রয়েছে আরকি।এসব কাজের জন্য আপনার দরকার হবে দক্ষতার ও অভিজ্ঞতার এবং সাথে ইন্টারনেট কানেকশন। বাংলাদেশ থেকেও আপনারা ডাটা এন্ট্রির কাজ করতে পারবেন।হোক সেটা অনলাইন অথবা চাকরি।তবে হ্যাঁ আপনি চেষ্টা করবেন আপনার টাইপিং স্পিড বাড়ানোর।ভাষা বুঝার ও লেখার দক্ষতা রাখবেন।ডাটা এন্ট্রির জন্য বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্ম রয়েছে এবং ডাটা এন্ট্রির অপারেটর হিসেবেও আপনি চাকরি করতে পারবেন যেমন আপওয়ার্ক, ফাইভার,ফ্রিল্যান্সার, বিডিজবস,চাকরি.কম,এক্সট্রাজবস এসব প্রতিষ্ঠানে আপনি ডাটা এন্ট্রির জব করতে পারেন।ফেসবুক,গুগল অথবা লিংকদিনের প্লাটফর্মে আপনি এসব কাজ খুঁজে পেতে পারেন।চোখ রাখুন এসব জায়গায়।তো বন্ধুরা আশা করি পোস্টটি আপনাদের ভালো লাগবে।কমেন্ট করে জানাবেন।অন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট নিয়ে আবার আসবো।সবাই ভালো থাকবেন,সুস্থ থাকবেন।আসসালামু আলাইকুম। 


নবীনতর পূর্বতন

نموذج الاتصال