বিজ্ঞান কি। What is Science

প্রকৃতি ও মহাবিশ্বের রহস্য উদঘাটনের একটি পদ্ধতি - বিজ্ঞান


Science ki


আসসালামু আলাইকুম আশা করি সবাই ভালো আছেন। আজকে আবার একটি ব্লগ পোস্ট নিয়ে আসলাম যা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা জানা আমাদের জন্য জরুরি। আজকের এই ব্লগ পোস্টে জানবো বিজ্ঞান কী? বিজ্ঞান সম্পর্কে আরো বিস্তারিত। তো চলুন জেনে নেই আজকের আজকের ব্লগ পোস্টের টপিকে।

বিজ্ঞান কি 

বিজ্ঞান হলো এমন একটি পদ্ধতি যা জ্ঞান অর্জন ও প্রয়োগের একটি শৃঙ্খলা যা বিশ্বের প্রাকৃতিক ঘটনাগুলোর পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ ও পরীক্ষনের মাধ্যমে ঘটনাগুলো বোঝার চেষ্টা করে।পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন ও পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যায়।বিজ্ঞান মূলত তিনটি প্রধান ভাগে বিগক্ত।যথা - প্রাকৃতিক বিজ্ঞান , সামাজিক বিজ্ঞান , প্রায়োগিক বিজ্ঞান।
বিজ্ঞান আমদের চারপাশের প্রকৃতি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে সাহায্য করে এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নে ভূমিকা রাখে।

বিজ্ঞানের ইতিহাস 

বিজ্ঞানের ইতিহাস অত্যন্ত ব্যপক ও প্রাচীন। প্রাচীন কাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত বিজ্ঞান মানুষের সুবিধার্থে বিভিন্ন আবিষ্কারের ধারণা দিয়ে যাচ্ছে।বিজ্ঞানের ইতিহাস সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো : 

(১) প্রাচীনকাল :

  • প্রাচীন মেসোপটেমিয়া : প্রাচীনকালের একটি সভ্যতা। এটি সিভিলাইজেশ্যন এর একটি অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। মূলত ইরাক ও কুয়েতের বাসিন্দারা প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার অধিবাসী ছিল।এই সভ্যতা ইউফ্রেটিস নদী ও তিগ্রিস নদীর তীরে অবস্থিত ছিল।
  • প্রাচীন মিশর : মিশরীয়রা জ্যোতির্বিজ্ঞান,চিকিৎসা, ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পারদর্শী ছিল। মিশরীয়দের পিরামিড নির্মাণ, ক্যালেন্ডার ব্যবস্থা ও মমি প্রক্রিয়া তাদেরই আবিষ্কার। প্রাচীন মিশর সভ্যতা ছিল মহান সভ্যতা।যা ছিল নীল নদের তীরে অবস্থিত। 
  • প্রাচীন গ্রিস : থ্যালিস,পিথাগোরাস, আর্কিমিডিস,এরিস্টটল ও হিপ্রোক্রেটিস ছিলেন প্রাচীন গ্রিসের বিজ্ঞানী ও দার্শনিক। তাদের জ্যোতির্বিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান গণিত ও চিকিৎসাক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল।

(২) মধ্যযুগ :

  • ইসলামী স্বর্ণযুগ : ৮ম শতক -১৪শ শতাব্দী সময়ে ইসলামী বিশ্বে  ইসলাম ও প্রযুক্তির অনেক উন্নতি হয়েছিল।আল-বিরুনি,খোয়ারিজম ও ইবনে-সিনার মতো বিজ্ঞানী গণিত,জ্যোতির্বিজ্ঞান,চিকিৎসাক্ষেত্রে ব্যপক উন্নতি করে।
  • ইউরোপীয় রেনেসাঁ : ১৪শ থেকে ১৭শ শতাব্দী পর্যন্ত সময়ে বিজ্ঞান, শিল্পকলা ও সাহিত্যক্ষেত্রে নতুনভাবে ঘটে থাকে।লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি, কোপের্নিকাস এবং কেপলার এই সময়ের বিশিষ্ট ব্যাক্তিত্ব।

(৩) আধুনিক যুগ :

  • গ্যালিলিও গ্যালিলি : ১৬শ ও ১৭শ শতাব্দীতে গ্যালিও গ্যালিলি প্রায় বিজ্ঞানের সব শাখায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল। গ্যালিলিও গ্যালিলি টেলিস্কোপ উন্নয়ন করে।তিনি জ্যোতির্বিজ্ঞানেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।
  • আইজাক নিউটন : ১৭শ শতাব্দীর শেষের দিকে গুরুত্বাকর্ষণ  তত্ত্ব ও গতির সূত্র প্রদান করেন,যা শারীরিক বিজ্ঞানে বিপ্লব সৃষ্টি করে।
  • আধুনিক বিজ্ঞান ও শিল্পবিপ্লব : ১৮শ শতাব্দী ও ১৯শ শতাব্দীতে শিল্প বিপ্লবের কারণে শিল্প ও প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটে।এই সময়টাতে বাষ্প ইঞ্জিন,টেলিগ্রাফ,বিদ্যুতের ব্যবহার আবিষ্কার হয়।
এছাড়াও ১৯০৫ সালে আলবার্ট আইনস্টাইন আপেক্ষিকতাবাদ তত্ত্ব পাবলিশ করে যা পদার্থবিজ্ঞানে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আনয়ন করে।১৯৫৩ সালের দিকে জেমস ওয়াটসন এবং ফ্রান্সিস ক্রিক ডিএনএর দ্বিতীয় সর্পিল গঠন আবিষ্কার করে।২১ শতাব্দীর শুরুর দিকে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও ইন্টারনেটের আবিষ্কার এবং উন্নত তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটায়।সাম্প্রতিক সময়ে AI এর গবেষনা ও আবিষ্কার প্রযুক্তিকে আরো শক্ত করে। মূলত এইভাবেই বিজ্ঞানের ইতিহাস অগ্রসর হচ্ছে ভবিষ্যতে এর উন্নতি আরো প্রকাশ হবে,এবং বর্তমানের চেয়ে দ্বিগুন শক্তিশালী প্রযুক্তি আবিষ্কার হবে।কিছু সময়ের ব্যপার।

আধুনিক বিজ্ঞানের জনক কে 

আধুনিক বিজ্ঞানের জনক হিসেবে গ্যালিলিও গ্যালিলিকে মনে করা হয়।কারণ গ্যালিলিও  গ্যালিলির বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি,কাজ ও দার্শনিকের মধ্যে আমূল পরিবর্তন এসেছে,তাই গ্যালিলিওকে আধুনিক বিজ্ঞানের জনক বলা হয়ে থাকে।এছাড়াও আরো কয়েকজনকে আধুনিক বিজ্ঞানের জনক বলা হয়ে থাকে। যেমন - স্যার আইজাক নিউটন, ফ্রান্সিস বেকনকেও বলা হয়া।তাদের কাজের পদ্ধতি ও ধারনা মানুষের কাছে সহজে বিশ্লেষিত হয়েছে।তাদের আবিষ্কার আধুনিক যুগে বিপ্লব ঘটিয়েছে।তাই তাদেরকে আধুনিক বিজ্ঞানের জনক বলা হয়ে থাকে।

বিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্য 

বিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্য বলতে বুঝায় যে সেসব মৌলিক বিষয় বা গুণাবলি যা অন্যান্য শাখা থেকে আলাদা করে বুঝায়।নিচে বিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্য দেওয়া হলো :
  • পর্যবেক্ষণ : বৈজ্ঞানিক ঘটনা সম্পূর্ণ পর্যবেক্ষণের উপর নির্ভরশীল।বিজ্ঞানীরা মূলত পর্যবেক্ষণ করেই প্রাকৃতিক ঘটনা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে। 
  • প্রমাণ : পর্যবেক্ষণের পরবর্তীতে রয়েছে প্রমাণিক বৈশিষ্ট্য। কেননা বিজ্ঞানের তত্ত্ব ও মতবাদ পরীক্ষা করার পরে সেই মতবাদগুলো যাচাইযোগ্য হতে হবে।
  • বিশ্লেষণাত্বক : বিজ্ঞান কোনো সমস্যার সমাধানে বিশ্লেষণাত্মক পদ্ধতি ব্যবহার করেন।এটিতে সমস্যাগুলো ভেঙে নির্ণয় করে সমাধানে আসে বিজ্ঞানীরা।
  • তাত্ত্বিক কাঠামো : বিজ্ঞান তাত্ত্বিক কাঠামোর উপর নির্ভর করে। এসব তাত্ত্বিক ও মডেল পূর্বাভাস করতে সহায়ক।
  • নিরপেক্ষতা : বিজ্ঞান ব্যক্তিগত মতামত থেকে দূরে থাকে।তারা ব্যক্তিগত মতামত দিতে পছন্দ করে না,পরিক্ষা,বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণের ফলে যা আসে তাই বিশ্বাস করে।
এই হচ্ছে বিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্য। এগুলো হচ্ছে একটি নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি।এগুলোর মাধ্যমেই বিজ্ঞান প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের আবিষ্কার করতে পারে।

বিজ্ঞানের প্রথম আবিষ্কার 

বিজ্ঞানের প্রথম আবিষ্কার কী তা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়,কারণ প্রাচীন যুগ থেকে অনেক উদ্ভাবন ঘটেছে যা ভিত্তি স্থাপন করেছে।তবে প্রাচীনকালের কিছু বিজ্ঞানের আবিষ্কার সম্পর্কে ধারনা দেয়া যাক : 

(১) আগুনের ব্যবহার :

প্রাচীনকালের মানুষেরা আগুনের ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণ করা শিখেছিল।আগুন তাপ ও রান্নাবান্নায় ব্যবহৃত হতো এটা দৃষ্টিগোচর হয়।এর পর থেকে আগুনের ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণ করতে শিখে যায়।

(২) চাকা :

প্রাচীন মেসোপটেমিয়ায় ৩,৫০০ বছর আগে চাকার আবিষ্কার হয়।যা তাদের পরিবহন কাজে ব্যবহার করতো। 

(৩) লেখার আবিষ্কার :

প্রাচীন সুমেরীয়রা ৩২০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ এ লিখন সিস্টেম আবিষ্কার করেন। যা তথ্য সংরক্ষণ করতে তাদের সাহায্য হয়েছিল।

(৪) গাণিতিক ধারণা : 

প্রাচীন মিশরীয়রা ও ব্যবিলনীয়রা প্রাথমিক গণিতের আবিষ্কার করেন।সংখ্যা, জ্যামিতি,আলজেবরা তাদেরই আবিষ্কার। যা পরবর্তীতে গণিতের ভিত্তি স্থাপন করে।

বিজ্ঞানের ভূমিকা

বিজ্ঞানের ভূমিকা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে ব্যপক ভূমিকা করব আসছে।বিজ্ঞানের ফলেই আজ আমরা আজ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যুগে বসবাস করছি।তাই আমাদের জীবনে বিজ্ঞানের ব্যপক ভূমিকা রয়েছে।

(১) প্রযুক্তিগত উন্নয়ন :

বিজ্ঞানের আবিষ্কার ও গবেষণা ট্যাকনোলোজির অগ্রসরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।যেমন - ইন্টারনেট, কম্পিউটার, মোবাইল ইত্যাদির আবিষ্কার প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ধারা।

(২) স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা : 

প্রযুক্তির সাথে সাথে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার ক্ষেত্রেও ব্যপক উন্নতি হয়েছে।নতুন নতুন উদ্ভাবনের মধ্যে আছে নতুন ওষুধ, চিকিৎসা পদ্ধতি, চিকিৎসার যন্ত্রপাতির আবিষ্কার, রোগ নির্ণয়ের নতুন নতুন পদ্ধতি। 

(৩) বিশ্ব সম্পর্কে জ্ঞান :

বিজ্ঞান আমাদেরকে পৃথিবীর সম্পর্কে ও বিশ্ব তত্ত্ব সম্পর্কে নিখুঁত ব্যাখ্যা প্রদান করেছে।আমাদেরকে প্রাকৃতিক সম্পদ, জলবায়ু ও প্রাকৃতিক সম্পদ সম্পর্কে সচেতন করেছে।

(৪) কৃষি বিপ্লব : 

কৃষি ক্ষেত্রেও বিজ্ঞান অনেক এগিয়ে গিয়েছে।নতুন নতুন আবিষ্কার, পদ্ধতি, ব্যবহার, গবেষণা ইত্যাদির সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে।আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং খাদ্য সংরক্ষণ পদ্ধতি আবিষ্কারের ফলে কৃষি ক্ষেত্রে সহজ হয়েছে।

ইত্যাদি এছাড়াও আরো অনেক ধরনের আবিষ্কার বিজ্ঞানীরা করেছে যা মানবজীবনে অবদান রাখে।

উপসংহার 

তো বুঝতে পারলেন যে বিজ্ঞান সম্পর্কে বিস্তারিত। মূলত বিজ্ঞান মানবজীবনের জন্য খুবই জরুরী।বিজ্ঞান মানবসমাজের একটি অবদান যোগ্য পদ্ধতি। এর ব্যবহারের ফলে মানুষ ও সমান উপকৃত হচ্ছে।বর্তমান প্রযুক্তিগত আবিস্কারের সেরা ইনভেনশন হচ্ছে মোবাইল,ইন্টারনেট,কম্পিউটার, বিদ্যুৎ ইত্যাদি এসব আবিষ্কার মানুষের জীবনে পরিবর্তন এনেছে।আধুনিক যুগে এসে মানুষ সকল কিছুর ব্যবহার সম্পর্কে জানে।তাই বিজ্ঞান আমাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

চিকিৎসা ক্ষেত্রেও উন্নতি ঘটিয়েছে এই বিজ্ঞান।নতুন নতুন আবিষ্কার মানুষের মধ্যে স্বস্তি এনেছে।চিকিৎসা পদ্ধতি, রোগ নির্ণয়ের নতুন পদ্ধতি মানুষের কাছে ভালো হয়েছে বলে মনে করা হয়।এছাড়াও শিক্ষাক্ষেত্রেও বিজ্ঞান থেমে থাকেনি।শিক্ষার্থীদের জীবনের মধ্যেও পরিবর্তন আনতে পেরেছে বিজ্ঞান।মাল্টিমিডিয়া একটি বিজ্ঞানের আবিষ্কার যা শিক্ষার্থীদের পড়া ও লেখার জন্য সুযোগ হয়েছে।এক কথায় ভার্চুয়াল ক্লাস।

AI - এর আবিষ্কার আরেকটি নতুন ও আধুনিক আবিষ্কার যা অনেকটা উপকৃত হচ্ছে মানুষ।বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে AI (Artificial Intelligence)  বলে দেয় সমাধান করে, এই আবিষ্কার খুব কাজের একটি আবিষ্কার। তাই বলা যায় যে বিজ্ঞান আমাদের মানবজীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

আজকের ব্লগ এই পর্যন্তই পোস্টটি ভালো লাগলে কমেন্ট করে জানাবেন।সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ। 
নবীনতর পূর্বতন

نموذج الاتصال