বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি কি। What is the scientific method

বিজ্ঞানের গবেষণায় তথ্য পর্যবেক্ষণ যাচাইয়ের পদক্ষেপ - বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি।


Scientific method


আসসালামু আলাইকুম আশা করি সবাই ভালো আছেন। বন্ধুরা গত পোস্টে আলোচনা করেছিলাম যে বিজ্ঞান কী এই সম্পর্কে এবং বিস্তারিত। আজ আরেকটি বিষয় নিয়ে আসলাম "বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি কি" এই সম্পর্কে। সুতরাং পোস্টটি সবাই মনোযোগ দিয়ে পড়বেন।কারণ গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা এটা "বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি কি" এই সম্পর্কে। তো চলুন জেনে নেই আজকের টপিকের বিষয়ে।

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি কি

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি হচ্ছে একটি কাঠামোগত পদ্ধতি যা বৈজ্ঞানিক গবেষনার মাধ্যমে জ্ঞান অর্জনের জন্য ব্যবহৃত হয়।এটি গবেষকদের নির্দিষ্ট ও পুনরাবৃত্তিমূলক ধাপে ধাপে কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকে।মূলত এই প্রক্রিয়াকেই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির বলে।

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রথম ধাপ কোনটি

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রথম ধাপ হলো পর্যবেক্ষণ। বিজ্ঞানীরা প্রথমে প্রাকৃতিক ঘটনা সম্পর্কে প্রথমে পর্যবেক্ষণ করে থাকে।তারপরে অন্যান্য বিষয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা ও বিশ্লেষণ করে থাকে।মূলত বিজ্ঞানীরা এসব প্রাকৃতিক ঘটনা দেখে তারপরে তারা এসবের প্রতি নজর রাখেন আর এটাই হলো পর্যবেক্ষণ। 

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির ধাপসমূহ 

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির বিভিন্ন ধাপ রয়েছে যা দ্বারা বিজ্ঞানীরা একটি ঘটনা সম্পর্কে জানান দেয়।নিচে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির ধাপসমূহ দেওয়া হলো :

  (১) সমস্যা নির্ধারণ 

প্রথম ধাপটি হলো প্রাকৃতিক ঘটনা সম্পর্কে সমস্যা নির্ধারণ করা যা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে জানা যায়।ফলে ঘটনা সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠে আসে আর বিজ্ঞানীরা সেই থেকে গবেষণা চালিয়ে যায়।এই ধাপটি বিজ্ঞানীরা সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্টভাবে পর্যবেক্ষণ করে থাকে।

  (২) তথ্য সংগ্রহ ও পর্যবেক্ষণ 

দ্বিতীয় ধাপে তথ্য সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করা হয়।বিদ্যমান গবেষণা পড়া,তথ্য সংগ্রহ ও বিভিন্ন সূত্র থেকে এই তথ্য আহরন করে বিশ্লেষিত হয়।

  (৩) পরীক্ষামূলক অনুমান

পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে একটি পরীক্ষার আনুমানিক ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়।অনুমানটি একটি ভবিষ্যদ্বাণী হিসে গণ্য করা হয়।

  (৪) পরীক্ষা-নিরীক্ষা 

এই ধাপে অনুমান যাচাই করার জন্য নিয়ন্ত্রিত একটি পরিবেশের প্রয়োজন হয়।এই পর্যায়ে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় যে অনুমান ঠিক কি না।

  (৫) ডেটা বিশ্লেষণ 

এই ধাপে পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করা হয়।পরিসংখ্যানগত পদ্ধতি ব্যবহার করে বিশ্লেষণ করে এবং তা অনুমানের সাথে মিলিয়ে দেখা হয় ঠিক কি না।

  (৬) প্রকাশনা ও পূনঃপরীক্ষা 

গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয় এবং অন্যান্য বৈজ্ঞানিকদের দ্বারা পুনঃপরীক্ষার মধ্য দিয়ে আবার তথ্য জানা হয়।

মূলত এসব নিয়মগুলো ফলো করেই বিজ্ঞানীরা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির গবেষণা করে থাকে।

পরীক্ষামূলক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রবক্তা কে

পরীক্ষামূলক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রবক্তা হচ্ছেন ফ্রান্সিস বেকন।ফ্রান্সিস বেকন ছিলেন একজন ইংরবজী দার্শনিক। ১৬০০ সালে তিনি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করবন।তিনি প্রমাণ ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে জ্ঞান অর্জনের গুরুত্বের উপর জোর দেয়।যুক্তিবাদী ধারনাকে প্রশ্ন করে।ফ্রান্সিস বেকনের এই প্রস্তাবনা পরবর্তীতে বৈজ্ঞানিক ভিত্তির উপর স্থাপন করে।

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য 

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য নিচে দেওয়া হলো :

১) পর্যবেক্ষণ : বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে প্রাথমিক ধাপ হলো পর্যবেক্ষণ। এই পর্যায়ে বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেন।

২) সমস্যা চিহ্নিতকরণ : এই পর্যায়ে পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে একটি সমস্যা বা প্রশ্ন খোজা হয়।এর ভিত্তিতে গবেষণা করা হিয়।

৩) হাইপোথিসিস : সমস্যা বা প্রশ্নের উত্তর হিসেবে একটি হাইপোথিসিস তৈরি করা হয়। 

৪) পরীক্ষা পরিচালনা : হাইপোথিসিস পরীক্ষা করার জন্য অবজারভেশনে করা হয়।

৫) ডেটা বিশ্লেষণ : পরীক্ষা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল বিশ্লেষণ করা হয়। 

৬) সিদ্ধান্ত গ্রহণ : শেষ পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় এটি সত্য কি না মিথ্যা।

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত তথ্য অনুসন্ধান 

বৈজ্ঞানিক ভাবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের তথ্য অনুসন্ধান করতে বিভিন্ন পরীক্ষণ ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে জানা যাবে।বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের সকল তথ্য বের করা যাবে।কিছু মাধ্যমের প্রয়োজন হবে।প্রাথমিক গবেষণায় মানুষের সাক্ষ্য, বচন,যুদ্ধের সময়কার দরকারি ডকুমেন্টস, ডায়েরি ইত্যাদি খোজ খবর নিলে তা পর্যবেক্ষণ হিসেবে পাওয়া যাবে।

পরবর্তীতে দরকার হবে এটির পরীক্ষা করার।পরীক্ষায় আপনি এই অনুমান করতে পারেন যে ভারত মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের পাশে ছিল।এটা তো আপনি আন্দাজ বা অনুমান করবেন তারপরে আসল বিষয় সম্পর্কে খোজ লাগাতে হবে।যেমন আপনার অনুমানের সাথে মিল আছে কি না তা দরকারি ঐ সাক্ষাৎ বা সাক্ষী, ডকুমেন্টস, বই,ইতিহাস ইত্যাদি ঘাটার ফলে মিলিয়ে দেখা যায় ঠিক মিল আছে কি না।

তার পরে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির শেষ ধাপে এসে বিজ্ঞানীরা একটি সিদ্ধান্ত নিবেন যে এটা কি ঠিক না ভূল ছিল।মূলত এই ভাবেই প্রাকৃতিক যেকোন ঘটনার আসল রহস্য উদঘাটন করা হয়।তারপরে একটি সিদ্ধান্তে আসা হয়।এগুলোই হলো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি।

শেষের কথা 

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি কী এবং এর সম্পর্কে বিস্তারিত জানলেন।আসলে কোনো ঘটনাই বৈজ্ঞানিক ধাপসমূহ ছাড়া সিদ্ধান্তে আসা যায় না।প্রকৃতির সব আসল রহস্য উদঘাটনে বৈজ্ঞানিক ধাপসমূহ প্রয়োজন। বিজ্ঞানীরা যেকোনো তথ্য সঠিকভাবে পর্যালোচনার জন্য বৈজ্ঞানিক ধাপসমূহ ফলো করে থাকে।

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রথম ধাপ হলো পর্যবেক্ষণ। তারপরের ধাপ হলো তথ্যকে সংগ্রহ করবে।এরপরে পরীক্ষামূলক ধাপ পার হবে ঠিক এইভাবেই ধাপে ধাপে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির শেষ হয়।আশা করি পোস্টটি আপনাদের ভালো লাগবে। ক্লিয়ারলি বুঝতে পারছেন বিষয়টি।তো সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আসসালামু আলাইকুম।

নবীনতর পূর্বতন

نموذج الاتصال