সঠিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে ১০
টি ওষধি গুনসম্পন্ন খাবার
তালিকা।
আসসালামু আলাইকুম। আশা করি সকল ভিজিটর ভালো আছেন।আজকে আপনাদের মাঝে একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্লগ পোস্ট নিয়ে আসছি "১০ টি ওষধি গুনে ভরপুর" খাদ্য তালিকা সম্পর্কে।
এসব খাবারের গুনাগুন কি কি,এবং কি কি উপকারিতা পাবেন,সমস্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।যা একজন ব্যক্তির দেহের জন্য প্রযোজ্য খাবার।তো চলুন জেনে নেয়া যাক।
ওষধি খাবার কি
ওষধি খাবার হচ্ছে এমন খাবার যা দেহের পুষ্টি সরবরাহ করে দেহের কিছু রোগ নিরাময় করে থাকে।যেসব খাবার খেলে শারীরিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এইসব খাবারে এমন এমন খাদ্যগুনাগুন উপাদান রয়েছে যা দেহের কিছু রোগের সাথে লড়াই করে দেহের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারে।এইসব খাবারকে প্রাচীনকাল থেকে আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে পরিচিত ছিল।
যা বর্তমানেও এর কদর রয়েছে।এসব খাবারের উপকারীতা অবেক।এইসব ওষুধ খাবার আপনি ঘরে থেকে খেতে পারবেন।অর্থাৎ এসব খাবার আপনার ঘরেই থাকে।যা প্রতিদিনের খাবারে পাওয়া যায়।
ওষধি খাবারের উপকারিতা
ওষধি গুনাগুন সম্পন্ন খাবার গ্রহনের ফলে শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।প্রতিদিন এই রকমের খাবার গ্রহণ করা উচিত।কারণ শারীরিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ওষধি খাবার গ্রহণ করা খুবই জরুরী। এতে করে কোনো রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
এসব খাবারের ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়।অনেক ওষধি খাবার রোধ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।এইসব খাবার প্রদাহ কমাতে সহায়ক।
ওষধি খাবার খাওয়ার ফলে পেটের গ্যাসের সমস্যা দূর হয়। খাবারের হজম শক্তি বাড়ে।পেটের যত সমস্যা এই খাবারের থেকে দূর হয়ে যায়।এছাড়াও আরো উপকারিতা রয়েছে ওষধি খাবারের।
ওষধি খাবার কি কি
এবার আসুন জেনে নেই যে ওষধি গুন সম্পন্ন খাবারগুলো কি কি।এসব খাবার গ্রহনের শারীরিক অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়।আসুন জেনে নেই কি কি খাবার এই তালিকায় আছে।
১) রসুন :
রসুন এমন একটি মসলাজাতীয় খাবার যা গ্রহনের ফলে উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এই খাবারের ফলে রক্তনালী প্রশস্ত হয়,যার ফলে রক্ত প্রবাহ হতে সহজ হয়।
এই রসুনের আরো একটি গুন হচ্ছে এই রসুন কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।রসুনে এন্টিব্যাকটেরিয়াল ও এন্টিভাইরাল গুনাগুন রয়েছে,যা সংক্রমণ রোগ প্রতিরোধে সক্ষম।
রসুনে প্রচুর পরিমাণে এন্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে যা,দেহের বার্ধক্য কমাতে সাহায্য করে।এই রসুন দেহের প্রদাহ কমায়।হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।রসুন হজমশক্তি বাড়ায়।
এই রসুন একজন ব্যক্তি প্রতিদিন চায়ের সাথে,সালাদের সাথে খেতে পারে।এছাড়াও এটি তেলের সাথে গরম করে শরীরের অন্যান্য জায়গায় মালিশ করলে ভালো হয়ে যায়।
২) এলোভেরা :
এটি এমন এক খাবার যা খাওয়াও যায় এবং শারীরিক কোনো স্থানের ব্যবহার করা যায়।দুদিকেই ভালো ও কার্যকরী। ত্বকের আর্দ্রতা ও ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে এলোভেরা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
পোড়া,কাটা,ক্ষত সারাতে এলোভেরা ব্যবহার করা হয়।
মুখের ব্রণ দূর করতে এলোভেরা ব্যবহৃত হয়।চুল পরিষ্কার রাখে এবং খুশকি রিমুভ করতে সহায়তা করে।
এলোভেরা জুস হজম শক্তি বাড়ায়।
এলোভেরাতে এন্টি অক্সিডেন্ট এর পরিমান প্রচুর যার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।এলোভেরা রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে।
এলোভেরা জেল দাতের মাড়ি ও দাতের জন্য খুব উপকারী।মুখের দুর্গন্ধ সরাতে পারে এই এলোভেরা।
৩) আমলকি :
ইন্ডিয়াতে আমলকিকে গুজবেরি নামে পরিচিত।আমলকিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে।ভিটামিন সি থাকার ফলে ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে।সংক্রমণ রোগ প্রতিরোধে সক্ষম।
কোসঠ্যকাঠিন্য দূর করে।পেটের যে হজম প্রক্রিয়া সেটি উন্নত করে।আমলকির জেল চুলে মাখালে চুলের গোড়ালি শক্ত হয়,এবং চুলের খুশকি দূর হয়।
উজ্জ্বল ত্বক রাখতে দরকারী। মুখের ব্রণ ও কালো দাগ কমাতে এলোভেরা খুব কার্যকরী ওষুধ।
৪) দারুচিনি :
দারুচিনি একটি মসলাদার খাবার।যা বেশিরভাগই মাংস তরকারিতে দিয়ে রান্না হয়।এই খাবারে এন্টি অক্সিডেন্ট এ ভরপুর। দারচিনি প্রাচীনকালের মানুষরা ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করতো।
দারচিনি ব্লাডের শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।ডায়বেটিস রোগীদের জন্য এই খাবার উপকারী।
এই খাবারটি ইনসুলিন সংবেদনশীল বাড়ায়।
দারুচিনির কিছু কিছু উপাদান স্মৃতি শক্তি বাড়াতে সহায়তা করে।এন্টিফাংগাল উপাদান থাকার ফলে রোগ প্রতিরোধে ক্ষমতা বাড়ায়।
০৫) তুলসি পাতা :
তুলসি পাতার নাম অনেকেই শোনেছেন।এর উপকারিতা যে অনেক আছেন এটিও নিশ্চই শোনে থাকবেন।তুলসি পাতা মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে।বিজ্ঞানীরা তুলসি পাতায় কিছু গবেষণা চালিয়েছিলেন,তারা দেখতে পেলেন যে তুলসি পাতা ক্যান্সারের কিছু কোষ ধ্বংস করতে সক্ষম।
কাশির নিরাময়ে তুলসি পাতার রস খুব কার্যকরী উপাদান।তুলসি পাতায় এন্টি অক্সিডেন্ট থাকে।এর গুনাগুন অনেক যা মানবদেহের জন্য খুব উপকারিতা মিলে।
০৬) পুদিনা পাতা :
ঔষধি গুনাগুন সম্পন্ন আরেকটি কার্যকরী উপাদান হচ্ছে পুদিনা পাতা।এই পাতাটি মূলত সুগন্ধি ও স্বাদের জন্য বিখ্যাত। এর অনেক কার্যকরী গুন রয়েছে।
এই পাতার রস অনেক উপকারী। কারণ এই পাতার রসে গ্যাস্ট্রিক ও হজম শক্তি বাড়াতে সহায়তা করে।অনেকে এই পাতা দিয়ে চা খেয়ে থাকে।
এর কিছু গুন আছে যা মানুষের শ্বাসকষ্ট কমাতে সহায়তা করে।বদহজম, পীড়া,গ্যাসের ব্যথা কমায়।ঠান্ডা, সর্দি কমায়।
পুদিনা পাতা প্রতিদিন খাওয়ার ফলে মুখের দুর্গন্ধ কমে যায়।ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।পুদিনা পাতার এমন গন্ধ যা গ্রানের ফলে মস্তিষ্কে গিয়ে প্রভাব ফেলে ফলে মাথাব্যথা কমে যায়।
০৭) মধু :
মধু হচ্ছে প্রাচীন ওষধি খাবারের মধ্যে একটি।এটি ওষধ জাতীয় একটি খাবার।এর নানা রকম গুন রয়েছে।মধু পানে গলা ব্যথা ও সর্দি কাশি কমে যায়।বুকের ময়লা বা অন্যান্য কিছু পরিষ্কার হয়ে যায়।
এটি খুব কার্যকরী একটি খাদ্য।মধুতে প্রাকৃতিক শর্করা থাকে।মধু তাৎক্ষণিক এনার্জি দিয়ে থাকে।এই খাবারটি ধরলে বুঝা যাবে ঠান্ডা কিন্তু এটি আসলে একটি গরম থাকে যখন খাওয়া হয়।
এই মধু রোগ প্রতিরোধে সক্ষম একটি খাবার।ওজন নিয়ন্ত্রণে এটি খুব কার্যকরী ওষুধ খাবার।প্রতিদিনের মেনুতে মধু রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মধু হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। সুতরাং এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকরী একটি ওষুধ জাতীয় খাবার।
০৮) লেবু :
লেবু একটি টক জাতীয় খাবার।এটির রস প্রায় লোকেরাই পান করে থাকে।অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি ফল বলতে পারেন লেবুকে।এই লেবু ভিটামিন সি,ফাইবার ও বিভিন্ন ভিটামিন রয়েছে।
শারীরিক স্ট্রেস ও উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে।
লেবুর সুগন্ধ মানুষের স্বাস্থ্যের উন্নত ঘটায়।রক্তে Ph লেভেল ঠিক রাখতে লেবুর কোনো জুড়ি নেই
রক্ত শোধন করে থাকে।শ্বাসকষ্ট কমাতে পারে লেবু।
লেবুর রস পান করা লিভারের জন্য ভালো।
০৯) আদা :
আদা হচ্ছে একধরনের মসলাজাতীয় খাদ্য।আদা একটি বহুল ব্যবহৃত একটি মসলা জাতীর খাদ্য।চিকিৎসা ক্ষেত্রেও এর ব্যবহার রয়েছে।
হজম হওয়ার যে প্রক্রিয়া এটি উন্নত করে এই আদা।
প্রদাহজনিত সমস্যার সমাধান এই আদা।বমি ভাব কমাতে আদা খুব কার্যকরী খাদ্য।বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় এটি প্রয়োজনীয় খাদ্য।
সর্দি কাশি ও ঠান্ডা কমাতে সাহায্য করে।আদা দিয়ে চা খাওয়া হলে গলা ব্যথা কমে যায়।রক্ত সঞ্চালন করতে আদা সাহায্য করে।
১০) হলুদ :
হলুদ হচ্ছে একটি মসলাজাতীয় খাদ্য,যা প্রাচীনকালের মানুষের এটি রান্নার চেয়ে চিকিৎসার ক্ষেত্রে ব্যবহার করতো।হলুদ ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
এই হলুদ লিভারের ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে।
হলুদ ত্বকের সমস্যা কনায়।এর দ্বারা অনেক ক্রিম তৈরি করা হয়।
সুতরাং এগুলো হচ্ছে ওষধি খাবার।তবে এছাড়াও আরো অনেক ধরনের ওষধি খাবার রয়েছে।এসব খাবার মানুষের শারীরিক স্বাস্থ্য সঠিক রাখতে সহায়তা করে।
উপসংহার
এসব খাবার তালিকা বাদেও আরো নানা রকম ওষধি খাবার তালিকা রয়েছে।এসব খাবার প্রাচীন মানুষের চিকিৎসার প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ছিল।
এসব প্রাকৃতিক খাবার এখনো অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এর ব্যবহার এখনো রয়েছে।এসবের উপাদান থেকে ওষধ তৈরি করা হয়ে থাকে।
আশা করি উত্তর পাইছেন।এসব খাবার প্রতিদিন খাওয়া উচিত যাতে শারীরিক সঠিক স্বাস্থ্য ভারসাম্য বজায় রাখা যায়।সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। ধন্যবাদ।
Tags
হেলথ টিপস