ওয়েব হোস্টিং কি,ওয়েব
হোস্টিং কত প্রকার ও কী কী
এবং আরো বিস্তারিত জানুন।
আশা করি আল্লাহর রহমতে সকলেই ভালো আছেন।আজকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্লগ পোস্ট নিয়ে আসলাম ওয়েব হোস্টিং সম্পর্কে।
আজকের এই ব্লগে ওয়েব হোস্টিং কি,ওয়েব হোস্টিং কত প্রকার, কিভাবে এই ওয়েব হোস্টিং কাজ করে চলুন জেনে নেয়া যাক।
ওয়েব হোস্টিং কি
ওয়েব হোস্টিং হচ্ছে একটি ওয়েবসাইট রাখার জায়গা।
এটি একটি সংস্থাও বলতে পারেন।আর এসব ওয়েব হোস্টিং সেবা কিছু এজেন্ট বা কিছু ব্যক্তি সেবা দিয়ে থাকে।
আর হোস্টিং রাখার জন্য ব্যক্তি বা এজেন্ট একটি সার্ভার ব্যবহার করে।আমাদের মতো ব্যক্তি যারা ওয়েবসাইট রাখতে চায় তারা মূলত এই হোস্টিং ব্যবহার করে থাকে।
আচ্ছা আপনাদের মাথায় আসে কি না যে আমরা যদি ওয়েবসাইট হোস্টিংয়ে রাখি,তাহলে হোস্টিং কোথায় রাখা হয়? আসলে হোস্টিং রাখতে একটি সার্ভার ব্যবহার করতে হয়।আর ঐখানেই রাখে।
হোস্টিং অনেক ধরনের হয়ে থাকে।যেমন - শেয়ার্ড হোস্টিং, ভিপিএস হোস্টিং, ডেডিকেটেড হোস্টিং, ক্লাউড হোস্টিং, রিসেলার হোস্টিং ইত্যাদি। এখান থেকে যেকোনো পোস্টিং ব্যবহার করে থাকে ওয়েবসাইটের মালিকরা যাতে অনলাইনে তাদের উপস্থিতি মিলে।
ওয়েব হোস্টিং এর ইতিহাস
এটির ইতিহাস খুবই বৈচিত্র্য। ওয়েব হোস্টিং মূলত ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এর একে অপরের সাথে জড়িত।আরো একটি বিষয় হচ্ছে ইন্টারনেটের অগ্রগতির সাথে জড়িত এই ওয়েব হোস্টিং সেবাটি।
১৯৯০ এর দশকে যখন ইন্টারনেটের শুরু দিন ছিল, ঐ সময়টিতে ওয়েবসাইট ব্যক্তিগত সার্ভারে হোস্ট করা হতো।যত বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা কেন্দ্র ছিল তারা তাদের ওয়েবসাইটের স্থান নিজস্ব সার্ভারে হোস্ট করতো।এর পরে আস্তে আস্তে নানান রমমের ওয়েব হোস্টিং সার্ভার আবিষ্কার হয়েছিল।
১৯৯১ তে টিম বার্নার্স লি একটি ওয়েবসাইট, হোস্টিং, সার্ভার তিনি বের করেছিল।যা আমি আগের পোস্টে এই সম্পর্কে বলেছিলাম।যাই হোক ১৯৯৩ সালে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ ইন্টারন্যাশনাল ইনফরমেশন ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি প্রথম মোজাইক নামের একটি ওয়েব ব্রাউজার প্রকাশ করেছিলেন।
১৯৯৪ সালের দিকে GeoCities প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল,আর এই geocities এ ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট হোস্ট করার জন্য ব্যক্তিদের দেওয়া হতো।এই হোস্ট সার্ভিসটি অনেক সুনাম খ্যাতি অর্জন করেছিল,যার ফলে ১৯৯৯ সালে Yahoo দ্বারা অধিকৃত হয়।
১৯৯৫ সালে সর্বপ্রথম বাণিজ্যিক ওয়েবসাইটের হোস্ট প্রচলন হয়েছিল। আর সেটি করেছিল তখনকার বিখ্যাত কিছু কোম্পানী যেমন - Brinkster,Angelfire,Tripod.তবে এই কোম্পানীগুলো বিনামূল্যে পরিষেবা দিতো।
আমরা বর্তমানে যে হোস্টিংয়ের সাথে cPanel পেয়ে থাকি এই সিস্টেম চালু হয়েছিল ১৯৯৮ সালে।যা পরবর্তীতে হোস্টিং পরিচালনার জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠে।
২০০০ এর দশমে ব্লগিং যাত্রা শুরু হয়েছিল।যেমন ব্লগার,ওয়ার্ডপ্রেস এর মতো একাউন্ট তৈরি করে অনন্য ভূমিকা রাখে উন্নয়নের যাত্রায়।
২০১০ এর দিকে ক্লাউড হোস্টিং, ভিপিএস হোস্টিং এর মতো সেবা চালু হয়।আর এইসব সেবা এখন বর্তমানেও আছে।
তবে আজ মানে বর্তমানের হোস্টিং সেবাগুলো আগের থেকে অনেক উন্নিত ও বৈচিত্র্য। বর্তমানে আধুনিক টেকনোলজি অগ্রগতির ফলে হোস্টিং সেবা প্রদানকারীর সহজলভ্য হয়ে উঠে কাস্টমার সার্ভিস দিতে।
আজকেই দিনে শেয়ার্ড হোস্টিং থেকে শুরু করে রিসেলারের মতো ওয়েব হোস্টিং পরিষেবা দিয়ে থাকে।CDN (Content Delivery Network) এর মতো ভালো পারফরম্যান্স দিয়ে যাচ্ছে।সুতরাং আগের চেয়ে বর্তমানে খুব জনপ্রিয় হোস্টিং সেবা এই যুগে আছে।
ওয়েব হোস্টিং কত প্রকার ও কি কি
ওয়েব হোস্টিং মূলত কয়েক রকমের হয়ে থাকে।যা ব্যক্তি ক্ষেত্রে ভালো সেবা ও পারফরম্যান্স দিয়ে যাচ্ছে।কাজ ও বিভিন্ন বিষয়ের উপরে নির্ভর করে হোস্টিং হয়ে থাকে।আসুন জেনে নেই যে কি কি রকমের হোস্টিং সেবা রয়েছে।
১) শেয়ার্ড হোস্টিং :
শেয়ার্ড হোস্টিং হচ্ছে একটি সাধারণ ও কম মূল্যের একটি হোস্টিং সেবা।এই সেবাটি তাদের প্রয়োজন যারা ছোট একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে চায়।ছোট ব্লগ ওয়েবসাইটের জন্য এটি উপযুক্ত। এই হোস্টিং সার্ভারে একাধিক ওয়েবসাইট মাত্র একটি হোস্টিং সার্ভারে রাখা যায়।হোস্টিং সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান CPU,Ram, HardDisk ব্যবহার করে থাকে।
২) ভিপিএস হোস্টিং :
ভিপিএস এর পূর্ণরূপ হচ্ছে Virtual Private Server. এই সার্ভারে তারাই হোস্টিং করতে পারে যাদের মাঝারি সাইজের ব্যবসায়ীক ওয়েবসাইট তৈরি করে থাকে।মানে এই হোস্টিং সেবা হচ্ছে এমন একটি হোস্টিং সার্ভার যেখানে শারীরিক সার্ভারকে ভার্চুয়াল সার্ভারে ভাগ করে
আলাদা অংশে বিভক্ত করে।
৩) ডেডিকেটেড সার্ভিস :
এটা সবচেয়ে বেস্ট হোস্টিং সার্ভার।এই ওয়েব হোস্টিংটি এমন একটি হোস্টিং যেখানে একজন ব্যক্তি,একটি ওয়েবসাইট, একটি সার্ভার। বুঝতে পারলেন না তো,আচ্ছে বুঝাচ্ছি।এটি এমন একটি হোস্টিং সেবা যেখানে একটি ব্যক্তির জন্য একটি ওয়েবসাইটের শুধুমাত্র পুরো একটি সার্ভার। অর্থাৎ একজন ব্যক্তির জন্য পুরো সার্ভারের মালিক একজন ব্যক্তি।অন্য কোনো ব্যক্তি এই সার্ভারে ভাগ বসাতে পারে না।
৪) ক্লাউড হোস্টিং :
এই হোস্টিং সেবাটি তাদের দরকার যাদের ওয়েবসাইটের সাইজ অনেক বড় বা ডাইনামিক ওয়েবপেজ। এই হোস্টিং মূলত একটি নেটওয়ার্ক থেকে একাধিক রিসোর্স নিয়ে হোস্টিং প্রদান করা।এই সেবায় উচ্চ স্কেলেবিলিটি,উচ্চ পারফরম্যান্স ও অটিমাইজ প্রদান করে থাকে।যখন ট্রাফিক বেড়ে যায় তখন আরো রিসোর্স যোগ হয়ে যায়।
৫) রিসেলার হোস্টিং :
এই হোস্টিং সেবা হচ্ছে এমন যে একটি হোস্টিং কোম্পানি তার সার্ভারের স্পেস না রিসোর্স ছোট ছোট ওয়েবসাইটের মালিকদের কাছে বিক্রি করে থাকে।যারা মূলত ছোট ব্যবসা দিয়ে মাত্র ব্যবসা শুরু করেছে তাদের জন্য এই হোস্টিং পরিষেবাটি প্রযোজ্য।
এছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের হোস্টিং সেবা রয়েছে।এখানে বিখ্যাত ৫ টি হোস্টিং সেবা সম্পর্কে বলেছি।এগুলোর সুবিধা হবে।বাংলাদেশের অনেক হোস্টিং সেবা প্রদানকারী রয়েছে,চাইলেই আপনারা হোস্টিং সুলভ মূল্যে কিনতে পারেন।
ওয়েব হোস্টিং কিভাবে কাজ করে
ওয়েব হোস্টিং সেবা হচ্ছে এমন যে একটি ওয়েবসাইটকে ইন্টারনেটে এক্সেসযোগ্য করতে সাহায্য করে।আর এই সব কাজ কিছু জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয়ে থাকে।এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ওয়েবসাইটের ফাইলগুলো একটি সার্ভারে সংরক্ষণ করা থাকে।চলুন বিস্তারিতভাবে জেনে নেয়া যাক।
১) সার্ভার ও হোস্টিং :
সর্বপ্রথম যারা হোস্টিং সেবা দিয়ে থাকে তারা একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি সার্ভার ব্যবহার করে যেখানে ওয়েবসাইটের সকল ফাইল, তথ্য বা কন্টেন্ট সংরক্ষণ করে রাখা যায়।আর সার্ভারটি ২৪/৭ সার্ভিস চালু থাকে।
যখন কেউ নির্দিষ্ট কিওয়ার্ড বা ইউআরএল টাইপ করে ঠিক তখন সার্ভারের সাথে সংযুক্ত হয় এবং ফাইলগুলো প্রদর্শন করে থাকে।
২) ডোমেইন নাম রেজিস্ট্রার :
একটি ওয়েবসাইটের ইন্টারনেটে এক্সেসযোগ্য প্রথম ধাপ হচ্ছে এই ডোমেইন নেম রেজিস্ট্রার করা।ডোমেইন নাম রেজিস্ট্রার করা পরে একটি ওয়েবসাইটকে হোস্টিংয়ের সাথে কনেক্ট করা হয় যাতে এটি রাখার জায়গা থাকে।তবে যারা ব্লগার ব্যবহার করেন,তাদের ক্ষেত্রে হোস্টিং আলাদা করে কিনতে হয় না।ব্লগার নিজেই হোস্টিং প্রদান করে।যাইহোক ডোমেইন কেনার পরে ডোমেইন নামটি সার্ভারের সাথে আইলি ঠিকানায় যুক্ত থাকে।যা একটি হোস্টিং কোম্পানি দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে।
৩) ফাইল আপলোড :
ডোমেইন নাম রেজিস্ট্রার করার পরে হোস্টিং সার্ভারে সাথে কানেক্ট করে ওয়েবসাইটের ফাইলগুলো আপলোড করা লাগে।আর এসব করা হয় মূলত হোস্টিংয়ের কন্ট্রোল পেনেল ব্যবহার করে।নেম সার্ভার,আরো নানান বিষয় সাবমিট করে ওয়েবসাইটের ফাইল আপলোড করা হয়।
৪) কনফিগারেশন :
এর পরবর্তীতে কাজ হচ্ছে ওয়েবসাইট কনফিগারেশন করা।অর্থাৎ সঠিকভাবে ওয়েবসাইট কাজ করার জন্য কনফিগারেশন করা প্রয়োজন। আর এসব করার জন্য হোস্টিং কোম্পানি থেকে cPanel দেয় যাতে কনফিগারেশন করতে পারে।
৫) DNS কনফিগারেশন :
সঠিকভাবে DNS কনফিগারেশন করার পরে ওয়েবসাইটটি ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত হয়।ডিএনএস ম্যানেজমেন্টএ গিয়ে নেম সার্ভার আপডেট করলেই ওয়েবসাইট কানেক্ট হয়ে যাবে।সিনেম ও A রেকর্ড এড করতে হয় DNS কনফিগারেশনে।
৬) ওয়েবসাইট এক্সেস :
এরপরে ওয়েবসাইট ব্যবহার যোগ্য হবে।শেষ হয়ে গেল ওয়েবসাইট কানেক্ট একটি সার্ভার ও হোস্টিংয়ের সাথে।
এখন এটি মনিটর করা উচিত।
এভাবেই কাজ করে একটি ওয়েবসাইট যখন এটি হোস্টিংয়ের সাথে কানেক্ট হওয়ার পরে।
ওয়েব হোস্টিং গুরুত্বপূর্ণ কেন
একটি ওয়েবসাইটের জন্য ওয়েব হোস্টিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা ইন্টারনেটে এক্সেসযোগ্য করতে সহায়তা করে এই ওয়েব হোস্টিং। এবার আলোচনা করবো যে একটি ওয়েব হোস্টিং কেন এতটা গুরুত্বপূর্ণ।
১) ওয়েবসাইট এক্সেসযোগ্য :
একটি ওয়েবসাইটের প্রাণ হচ্ছে ভিজিটর।যদি ওয়েবসাইট ভিজিটরদের জন্য এক্সেসযোগ্য না হয় তাহলে সেখানে ব্যবহারকারীরা কিভাবে প্রবেশ করবে ওয়েবসাইটে। এইটা একটা মূল কারণ হোস্ট গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে।
২) উন্নত পারফরম্যান্স :
কিছু কিছু ওয়েব হোস্টিং কোম্পানি আছে যাদের সেবার মানগুলো অনেক উন্নত।তাদের যে হোস্টিং সেবা সেখানে ভালো পারফরম্যান্স থাকে।উচ্চমানের ওয়েব হোস্টিং সার্ভিস ওয়েবসাইটের লোডিং টাইম কমাতে সাহায্য করে যা ব্যবহারকারীর জন্য খুবই ভালো।
৩) সিকিউরিটি :
ওয়েব হোস্টিং সার্ভিস প্রোভাইডররা ওয়েবসাইটের মালিকদের SSL Certificate দিয়ে থাকে,অর্থাৎ ওয়েবসাইটের মালিকদের সিকিউরিটির কথা চিন্তা করে তাদেরকে FireWall,SSL,Backup ইত্যাদি।
৪) কাস্টম ইমেইল এড্রেস :
ব্যক্তির ব্যবসায়ের নামের সাথে মিল রেখে ইমেইল ঠিকানা তৈরি করা যায়।যা বিজনেস ইমেইল হিসেবে পরিচিত। হোস্টিংয়ের সাথে ইমেইল এড করার সুবিধা দিয়ে থাকে হোস্টিং কোম্পানিগুলো।
৫) SEO :
হোস্টিং কোম্পানোদের সেবাগুলো SEO অপ্টিমাইজেশন যোগ্য,যা ব্যক্তির ওয়েবসাইটের র্যাংকিং বাড়াতে সাহায্য করে।
সুতরাং বুঝতেই পারছেন অনলাইন জগতে ওয়েব হোস্টিং কেন এত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবহারকারীরা যাতে আপনার ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারে,এই ব্যবস্থা একটি হোস্টিং করে দেয়।
উপসংহার
সুতরাং নলেজে অবশ্যই ওয়েব হোস্টিং সম্পর্কে ধারনা পেয়ে গেছে।আসলে আমরা ইন্টারনেটে যে ওয়েবসাইটগুলো দেখি বা প্রবেশ করি ঐসব ওয়েবসাইট কোনো না কোনো ওয়েবসাইটে হোস্ট করা রয়েছে।
ব্লগার ব্যবহারকারীদের কোনো হোস্টিং সেবা নিতে হয় না।কারণ ব্লগার হচ্ছে গুগল দ্বারা পরিচালিত একটি প্লাটফর্ম, এবং এর হোস্ট গুগল নিজেই করে থাকে
যারা ব্লগার ব্যবহার করেন তারা শুধু ডোমেইন কিনলে চলবে,হোস্টিং কিনতে হবে না।শুধুমাত্র কাস্টম ডোমেইন এ গিয়ে ডোমেইন এড করে নিলে হবে,কিছু সহজ কাজের মাধ্যমে।
অন্যান্য যারা ব্লগার ব্যবহার করে না তাদের জন্য অবশ্যই ওয়েব হোস্টিং প্রয়োজন পড়বে।কারণ আপনার ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট, তথ্য,গুরুত্বপূর্ণ ফাইল ইত্যাদি রাখার জন্য তো একটি জায়গা লাগে,আর এই জায়গাটি হচ্ছে হোস্টিং।
ওয়েব সার্ভার সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন...
Tags
SEO