দূর্ঘটনার সুরক্ষার জন্য জীবন বীমার প্রয়োজন।
গত পর্বে আপনাদেরকে বীমা কী এবং বিস্তারিতভাবে বলেছিলাম।আজ আমরা আলোচনা করবো জীবন বীমা কর্পোরেশন সম্পর্কে। জীবনা বীমা সম্পর্কে গত পোস্টে অবশ্যই বুঝলেন।
আজ আপনাদেরকে জীবন বীমা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করে বুঝিয়ে দিবো।তো কথা বেশি না বাড়িয়ে চলুন মূল টপিকে যাই।
জীবন বীমা
নামেই হয়তোবা বুঝতে পারছেন যে জীবন বীমা কী হতে পারে।আসলে জীবন বীমা হচ্ছে আর্থিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা যেখানে একটি বীমাকারী প্রতিষ্ঠান ও বীমাগ্রহীতার মধ্যে চুক্তিবদ্ধ হয়।
এই চুক্তিতে মূলত বীমা গ্রহীতা কিছু প্রিমিয়াম প্রদান করে থাকে।পরবর্তীতে কিছু নির্দিষ্ট শর্ত সাপেক্ষে ব্যক্তির মৃত্যুর পরে সেই প্রিমিয়াম ব্যক্তির নমিনীকে ফেরত দেয়া হয়।
মূলত জীবনের ঝুঁকি কমানোর জন্য জীবন বীমা করা হয়ে থাকে।জীবন বীমার মূল উদ্দ্যেশ্য হলো বীমা গ্রহীতা যদি কোনো কারণে অসুস্থ বা মৃত্যু হয় তাহলে তার পারিবারিক আর্থিক সংকটের মধ্যে থাকলে তার পরিবারের সাহায্য বা হেল্প হয়ে যায়।
এই কারণেই মূলত জীবন বীমা (Life insurance) প্রতিষ্ঠিত হয়।এছাড়াও কিছু বীমাকারী প্রতিষ্ঠান অর্থ সঞ্চয় করার সুযোগ দেয় যাতে ভবিষ্যতের পরিকল্পনায় কাজে লাগাতে পারে।
তাই একজন ব্যক্তির ভবিষ্যত পরিকল্পনা ও ব্যক্তির সংকটাপন্ন সময়ে বীমা কর্পোরেশন কোম্পানি বিশ্বস্ত বন্ধু।
জীবন বীমা পলিসি
জীবন বীমা পলিসি হচ্ছে আর্থিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা যা একজন ব্যক্তির পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তা দেওয়া হয়।নিচে জীবন বীমার পলিসি সম্পর্কে দেওয়া হলো :
১) Term Life Insurance :
টার্ম লাইফ ইন্সুরেন্স হচ্ছে এমন একটি পলিসি যেখানে নির্দিষ্ট অর্থ বীমা গ্রহীতা অর্থ জমা করে রাখেন ভবিষ্যতের জন্য।এই বীমায় ব্যক্তির মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কোনো অর্থ ফেরত দেওয়া হয় না।এই শর্তকেই বলা হয় Terms Life Insurance।
২) Whole Life Insurance :
এই পলিসিতে নির্দিষ্ট অর্থ কভারেজ করা হয়।ব্যক্তির মৃত্যুর পরে পুরো টাকা ফেরত দেয়া হয়।
৩) Endowment Policy :
এই পলিসিতেও একই ভাবে অর্থ জমা রাখা হয় এবং ব্যক্তির মৃত্যুর পরে পুরো টাকা ফেরত দেয়া হয়।
৪) Universal Life Insurance :
ইউনিভার্সাল লাইফ ইন্সুরেন্স এ অর্থ জমা রাখার পাশাপাশি সঞ্চয়ও করে রাখতে পারে।ব্যক্তির মৃত্যুর পরে কভারেজ টাকা ও সঞ্চয় হিসাবের টাকা ফিরিয়ে দেয়া হয়।এই পলিসি একটি স্থায়ী হিসাব।
জীবন বীমার সুবিধা
জীবন কি তা অবশ্যই বুঝতে পারলেন।এখন আসুন জেনে নেই যে আসলে জীবন বীমার সুবিধা কী কী।
১) জীবন বীমার ক্ষেত্রে বীমাগ্রহীতার মৃত্যুর পরে সম্পূর্ণ টাকা পরিবারের নির্দিষ্ট একজন বা নমিনী পেয়ে থাকেন।সারা বছরে বা নির্দিষ্ট সময়ের পরে পুরো টাকা ফেরত পেয়ে থাকে যা তার পরিবারের আর্থিক সংকট কাটে।
২) জীবন বীমা কর সুবিধা প্রধান করে থাকে এবং যখন টাকা দেওয়া হয় তখন কর ছাড়া পুরো টাকাটি দেওয়া হয়।
৩) কিছু জীবন বীমা পলিসি সেভিংস এবং বিনিয়োগের সুযোগ দিয়ে থাকে। হোল লাইফ বা ইউনিভার্সাল লাইফ ইন্সুরেন্স এর ক্ষেত্রে সঞ্চয় করার সুযোগ দেয়, পরে সুদে হারে এই টাকাটি বাড়তি হিসেবে পেয়ে থাকে।
৪) অনেক ক্ষেত্রে জীবন বীমা লোন হিসেবে অর্থ দিয়ে থাকে।অর্থাৎ একজন ব্যক্তি চাইলে পলিসির পরিবর্তে লোন নিতে পারে। যা একজন ব্যক্তির সহায়ক হতে পারে।
মোট কথা,জীবন বীমার সুবিধা রয়েছে যা একজন ব্যক্তির ক্ষেত্রে যথেষ্ট।
জীবন বীমার অসুবিধা
জীবন বীমার অনেক সুবিধা থাকলেও কিছু কিছু অসুবিধাও রয়েছে।নিচে এই সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১) জীবন বীমার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হচ্ছে যে জীবন বীমার প্রিমিয়াম রেগুলার দিতে হয়।অর্থাৎ কোনো কিস্তি বা প্রিমিয়াম মিস দেয়া যাবে না।এটাও একটি সমস্যা।
২) জীবন বীমার মেয়াদ দীর্ঘমেয়াদী হয়ে থাকে। কোনো সময় যদি আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হয় তখন একজন ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম দেয়াটা কঠিনও হতে পারে।
৩) যদি ভবিষ্যতে বীমা কোম্পানির দেউলিয়া হয়ে যায় তাহলে ব্যক্তির অর্থ ফেরত পেতে সমস্যা হতে পারে।
৪) কিছু কিছু পলিসির নিয়ম অনুযায়ী বয়স বাড়ার সাথে সাথে প্রিমিয়াম অর্থ বাড়তে থাকে।যা অনেক ব্যক্তির ক্ষেত্রে কঠিন হতে পারে।
এবার আসুন এই অসুবিধার ক্ষেত্রে একটি উদাহরণ দেয়া যাক - মনে করুন একজন ব্যক্তি নির্দিষ্ট একটি বীমা প্রতিষ্ঠানে ১০ বছরের জন্য প্রিমিয়াম জমা করবেন এবং প্রতিমাসে ২,০০০ টাকা করে প্রিমিয়াম জমা করবে।এখন এই ১০ বছরের ভিতরে কোনো প্রিমিয়াম মিস দেয়া যাবে না।এমতাবস্থায় কি বুঝলেন।
আসলে কার কখন কি হয়ে যায় বলা যায় না।এছাড়া একজন ব্যক্তির আর্থিক সমস্যাও হতে পারে এই ১০ বছরের ভিতরে।তাই বুঝে শোনে বীমা করাটা জরুরি। সকল সঠিক তথ্য নিয়ে বীমা করাটা অনেক জরুরী।
জীবন বীমা পেনশন স্কিম
জীবন বীমা পেনশন স্কীম হচ্ছে এমন যে একজন ব্যক্তি ২০ বছর বয়সে প্রতি মাসে ৫,০০০ টাকা করে জমা করবেন।পরবর্তীতে ব্যক্তির যখন ৬০ বছর বয়স হবে তখন থেকে পেনশন পেতে শুরু করবে।আর একেই বলে জীবন বীমা পেনশন স্কিম।
অর্থাৎ ব্যক্তির অবসর সময়ে আর্থিক নিরাপত্তা পাবে।যা একজন ব্যক্তি অবসরকালীন সময়ে আয় করে থাকেন।৬০ বছর বয়সে মৃত্যু না হয়ে ব্যক্তি অবসর সময়ে টাকা পেতে থাকে যা তার আর্থিক সুরক্ষা।
নির্দিষ্ট বয়সসীমায় পৌছানোর পরে ব্যক্তি টাকা পেতে থাকে। আর এই টাকা হয়তো মাসে বা বছরে দিয়ে থাকে।
এটি এমন একটি ব্যবস্থা যা নিয়মিত প্রিমিয়াম প্রদান করতে হয় সঞ্চয়ী হিসেবে যা ব্যক্তির পরে কাজে লাগতে পারে।
জীবন বীমার নিয়ম ও শর্তাবলী সঠিকভাবে দেখে ও পড়ে নেয়া উচিত যাতে ভবিষ্যতে কোনো সমস্যার সম্মুখীন যেন হতে না হয়।
প্রিমিয়াম নির্ধারণ কিছু বিষয়
প্রিমিয়াম এর ক্ষেত্রে যদি একজন ব্যক্তির বয়স কম হয় তাহলে তার মাসিক প্রিমিয়াম কম হবে।অন্যদিকে যদি বীমার পরিমাণ বাড়ে তাহলে প্রিমিয়াম বাড়বে।
আর যদি একজন ব্যক্তি দীর্ঘ মেয়াদের জন্য বীমা করে থাকে তাহলে প্রিমিয়ামও কমে হবে।তাই এসব বিষয় দেখে বীমা করবেন যাতে পরবর্তীতে কোনো সমস্যা যেন না হয়।
উপসংহার
তো বুঝতে পারলেন জীবন বীমা সম্পর্কে। মূলত বীমা হচ্ছে একজন ব্যক্তির ভবিষ্যতের পরিকল্পনা অথবা মৃত ব্যক্তির পরিবারের নমিনীর আর্থিক নিরাপত্তা।
বীমা করাটা জীবনে জরুরি।তবে সঠিক নিয়ম ও শর্ত মেনে বীমা করা উচিত।কম বয়সে বীমা করা উচিত যাতে প্রিমিয়াম কম হয়।কারণ মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে অর্থ ফেরত পাওয়া যায় না।
সঞ্চয়ী হিসাব মতে ভবিষ্যতের অর্থ জমা রাখলে একজন ব্যক্তির নিরাপত্তার জন্য কাজে লাগবে।আশা করি সব বুঝতে পারলেন।আজকের পোস্ট এই পর্যন্তই। নেক্সট আরেকটি পোস্টে আলোচনা করবো অন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে।সবাই ভালো থাকুন,সুস্থ থাকুন।
Tags
ব্যাংক