এনজিও (NGO)

এনজিও কী? এনজিও এর ইতিহাস আরো বিস্তারিত(NGO)

What is NGO

আসসালামু আলাইকুম আশা করি সবাই ভালো আছেন। বন্ধুরা আমরা অনেকে হয়তো এনজিও নামটা শোনেছি।কিন্তু আমরা মোটামোটি অনেকেইই জানি যে এটা একটি অলাভজনক বেসরকারি সংস্থা।আজকের এই ব্লগ পোস্টে আমি আরো ভালোভাবে বিস্তারিত আলোচনা করবো। তাই আসুন জেনে নেই।

এনজিও কী (NGO)

এনজিও এর পূর্ণরূপ হচ্ছে Non - Governmental Organisation.এনিজ হচ্ছে একটি অলাভজনক বেসরকারি সংস্থা প্রতিষ্ঠান। এনজিও প্রধানত সামাজিক,অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, পরিবেশগত এবং মানবাধিকার ইস্যুতে কাজ করে থাকে।

এনজিও মূলত সরকার এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে একদমই আলাদা।এনজিও এর মূল কাজ হচ্ছে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করে থাকে।এনজিও কাজের ক্ষেত্রে ব্যাপক।

তারা শিক্ষা,স্বাস্থ্যসেবা,পরিবেশ সংরক্ষণ, নারী ও শিশু অধিকার,দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, দারিদ্র্য দূরীকরণে মতো নানা ধরনের ইস্যুতে কাজ করে থাকে।অনেক সময় এনজিও তাদের কাজের ক্ষেত্রে স্থানীয় সমাজের দরকার অনুযায়ী প্রকল্প তৈরি করে এবং তা বাস্তবে রুপান্তর করে থাকে।

এনজিও পিছিয়ে পড়া মানুষদেরকে স্বনির্ভর করার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে থাকে।এনজিও এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তারা মানুষ বা পরিবেশের জন্য স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে।তাদের তহবিল সংগ্রহের প্রধান উৎস হলো 
দাতা সংস্থা,আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং ব্যক্তিগত দান।

এনজিও অনেক সময় আন্তর্জাতিক স্তরে কাজ করে থাকে এবং বিভিন্ন দেশের জনগনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।সাম্প্রতিক এনজিও প্রযুক্তির উন্নয়নে তাদের সেবা মানুষের কাছে পৌঁছাতে পেরেছে।

এনজিও এর ইতিহাস 

এনজিও বা বেসরকারি সংস্থা যার ইতিহাস বেশ পুরোনো।বিভিন্ন আন্দোলন ও সামাজিক পরিবর্তনের সাথে জড়িত।এনজিও এর ধারনা প্রথম সুচিত হয় ১৯৪৫ সালে যখন জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়।জাতিসংঘে প্রথমবারের মতো "Non Government" প্রথম সংবিধানে ব্যবহার করা হয়।

তবে আধুনিক এনজিও এর ধারনা হয় ১৯শ শতাব্দীর দিকে।১৯শ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ব্রিটেনে এবং যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন দাতব্য সংস্থা এবং মানবাধিকার সংস্থা গঠন করে।সেই সময়ে দাসপ্রথা আন্দোলন,নারীদের ভোটাধিকার আন্দোলন, শিশু শ্রম আন্দোলন শুরু হয়।

যা পরবর্তী সময়ে এনজিও এর সৃষ্টি করে।তখন এই সংস্থাগুলো মানবাধিকার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও দারিদ্র্য বিমোচনে কাজ শুরু করে।বিশ্বযুদ্ধের পরে এনজিও এর গুরুত্ব আরো বেশি বাড়তে থাকে।

দ্বিতী বিশ্বযুদ্ধের পরে জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠার পরে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এনজিও এর ভূমিকা আরো দৃঢ হয়ে উঠে।১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত রেড ক্রস আন্তর্জাতিক সংস্থা, যেটি মানবিক মানবিক সহায়তা প্রদান করে থাকে।রেড ক্রস হচ্ছে প্রথম দিকের একটি এনজিও।

বর্তমানে এনজিও সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।এছাড়াও এনজিও স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করে থাকে।

বাংলাদেশে কতগুলো এনজিও আছে

বাংলাদেশের মধ্যে এনজিও এর সংখ্যা বেশি আছে এবং সারা বাংলাদেশে বিস্তৃত। বর্তমানে বাংলাদেশে নিবন্ধিত এনজিও এর সংখ্যা হচ্ছে ২,৫০০ এর বেশি।এই সংস্থাগুলো বিভিন্ন কাজে ভূমিকা রাখে।

ব্রাক (BRAC), গ্রামীন ব্যাংক এবং আশা হচ্ছে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য এনজিও গুলোর মধ্যে অন্যতম। ব্রাক বিশ্বের সবচেয়ে বড় এনজিও হিসেবে পরিচিত যা ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। 

গ্রামীন ব্যাংক যা ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের জন্য বিখ্যাত।১৯৮৩ সালে নোবেল বিজয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনুস এই গ্রামীন ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত করে।বাংলাদেশে এনজিও গুলোর ভুমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

এনজিও বিশেষ করে গ্রামীন জনমানুষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।এই সংস্থাগুলো সরকারের পাশাপাশি কাজ করে এবং বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প তৈরি করে তা বাস্তবায়ন করে থাকে।

বাংলাদেশের প্রথম প্রতিষ্ঠিত এনজিও 

বাংলাদেশের প্রথম প্রতিষ্ঠিত এনজিও "কো-অপারেটিভ 
ক্রেডিট ইউনিয়ন লীগ অব বাংলাদেশ" (CCULB) যা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৫ সালের দিকে। তবে স্বাধীনতার পরে 
প্রতিষ্ঠিত প্রথম বড় এনজিও হচ্ছে "গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র" এটি ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।

স্বাধীনতার পর থেকে আরো অন্যান্য এনজিও প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে থাকে।তার মধ্যে হচ্ছে একটি ব্র‍্যাক (BRAC)।ব্র‍্যাক ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।আর এই ব্র‍্যাকের প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছে ফজলে হাসান আবেদ।আর আজ এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় এনজিও।

অন্যদিকে আরেকটি বিখ্যাত এনজিও হচ্ছে গ্রামীন ব্যাংক।ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের জন্য বিখ্যাত। এর প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছে বাংলাদেশের নাগরিক নোবেল বিজয়ী ড.মোহাম্মদ ইউনুস।তিনি এটি ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।এটি প্রতিষ্ঠিত করে আর্থিক খাতে বিপ্লব ঘটায়।

বাংলাদেশের এনজিওর তালিকা

বাংলাদেশে অনেক ধরনের এনজিও প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা কিনা তাদের কাজ করে যাচ্ছে এবং সমাজের নানা উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছে।এখানে আপনাদেরকে কিছু এনজিও তালিকা দেওয়া হলো :- 

১) ব্র‍্যাক (BRAC) 

ব্র‍্যাক বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বড় একটি এনজিও। যার কাজ হচ্ছে - শিক্ষা,স্বাস্থ্য, শিক্ষা, দারিদ্র্য দূরীকরণ অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে।ব্র‍্যাকের কার্যক্রমের পরিধি অত্যন্ত বিস্তৃত।ব্র‍্যাক মূলত শিক্ষা,স্বাস্থ্য, ক্ষুদ্রঋণ, 
নারীর ক্ষমতায়ন,কৃষি উন্নয়ন, মানবাধিকার এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের মতো কার্যক্রম করে থাকে।

২) গ্রামীন ব্যাংক (Grameen Bank)

গ্রামীন ব্যাংক বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত একটি ক্ষুদ্রঋণ ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান যা ১৯৮৩ সালে ড.মোহাম্মদ ইউনুস প্রতিষ্ঠা করেছেন।এটি মূলত প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল দারিদ্র্য জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের লক্ষ্যে।গ্রামের মানুষের যাতে ছোট ছোট পরিমাণে ঋণ নিতে পারে।

৩) গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র (Public health Centre)

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র যা বাংলাদেশের একটি অগ্রনী এনজিও।
এই সংস্থা শিক্ষা,স্বাস্থ্য এবং সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি ১৯৭২ সালে ড.জাফরউল্লাহ চৌধুরী দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ড.জাফর উল্লাহ মুক্তিযোদ্ধাদের 
চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন এবং সেই অভিজ্ঞতা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি এই গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন।

৪) আশা (ASA)

আশা হচ্ছে বাংলাদেশের একটি এনজিও প্রতিষ্ঠান। এটি ক্ষুদ্রঋণ এবং সামাজিক উন্নয়নে কাজ করে থাকে।আশা হচ্ছে বাংলাদেশের উন্নয়নমূলক সংস্থা।এই সংস্থাটি ক্ষুদ্রঋণ দিয়ে দারিদ্র্য জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজ করে।

৫) সেভ দ্যা চিলড্রেন 

সেভ দ্যা চিলড্রেন এই সংস্থাটি শিশু অধিকার, শিক্ষা,স্বাস্থ্য এবং আরো অন্যান্য কাজ করে থাকে।

আপাতত আপনাদেরকে ৫ টি এনজিও নিয়ে আলোচনা করলাম।আগামী অন্য একটি পোস্টে আপনারদেরকে জানাবো সকল এনজিও সম্পর্কে। 

উপসংহার 

এনজিও সম্পর্কে আপনারা ধারণা পেয়েছেন আশা কর।
আসলে এই এনজিওগুলো বাংলাদেশের দারিদ্র্য মানুষের জন্য অনেক কাজ করে থাকে।সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। 

এদের জন্য জন্য সমাজের হত দরিদ্র মানুষেরা ক্ষুদ্রঋণ গ্রহন করে তা উন্নয়নে বাস্তবায়ন করে থাকে।এনজিও এর গুরুত্ব অপরিসীম। এনজিও এর মাধ্যমে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পায়।
নবীনতর পূর্বতন

نموذج الاتصال